বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ড্রোন , অবাক করা সব তথ্য

বন্ধুরা আজকে আমরা জানব যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিশ্বের সবচেয়ে ছোট ড্রোন সম্পর্কে আপনারা জেনে হয়তো অবাক হবেন যে এই ড্রোনটির কার্যক্ষমতা এবং এর দক্ষতা দেখে

ড্রোন ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানোঃ

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ড্রোন ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানো। এটি আমেরিকার বৃহৎ সামরিক সরঞ্জাম। প্রতিষ্ঠান ফ্লির সিস্টেম এর অধীনে নরওয়ের প্রক্স ডায়নামিক ২০০৮ সালে ক্ষুদ্রাকৃতির, চালকবিহীন এই ড্রোন নিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রায় ৩ বছর চেষ্টার পর তারা ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানো সফলভাবে তৈরি করতে সক্ষম হয়। ২০১২ সালে এসে এটি প্রক্স ডায়নামিক ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানোর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। 

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

এই ড্রোন টি বর্তমানে আমেরিকার স্পেশাল ফোর্স,অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স,স্পেন, নরওয়ে ও ভারতসহ বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশের সেনাবাহিনী ব্লক হর্নেট ন্যানাে এই ড্রোনটি ব্যবহার করছে। ড্রোন হলাে এমন একটি চালকবিহীন আকাশযান যা কোনাে কম্পিউটার প্রােগ্রামের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।ড্রোনটির মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর গতিবিধির লাইভ স্ট্যাটাসের পাশাপাশি HD ছবি-ভিডিও দেখা যাবে।

অভিনব এই ড্রোনের নাম ‘দ্য ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানো,পার্সোনাল রিকনিসেন্স সিস্টেম। বিগত বছরগুলােতে পুরাে পৃথিবীতে বেড়েছে সামরিক ব্যয়। যুদ্ধ-বিগ্রহের প্রস্তুতি, অস্ত্রাগার বাড়িয়ে তােলা আর বিধ্বংসী প্রযুক্তির উদ্ভাবনে বিভিন্ন রাষ্ট্রের উৎসাহ চোখে পড়ার মতাে।

বিভিন্ন কারণে অনেক দেশই সামরিক খ্যাতে খরচ অনেক বাড়িয়েছে। সেই সামরিক ভাণ্ডারে এবার নতুন প্রযুক্তির ড্রোন যােগ করেছে আমেরিকা। মার্কিন সৈন্যদের জন্য তৈরি নতুন প্রযুক্তির এই ড্রোনটি কোন ব্যক্তির পকেটে সহজেই রাখতে পারবে। এমনকি হাতের তালুতেও লুকিয়ে রাখা যাবে উন্নতমানের এই ড্রোনটি।

যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে প্রায় ১.২ মাইল বা ২ কিলােমিটার পর্যন্ত নজর রাখতে সক্ষম ছোট্ট এই ড্রোন ।ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানাে ড্রোনটি দেখতে একদম খেলনা হেলিকপ্টারের মতাে। লেটেস্ট মডেলের ৬.৬ ইঞ্চি লম্বা এই ড্রোনটির ওজন মাত্র ৩৩ গ্রাম। ব্যাটারিতে ফুল চার্জ থাকাবস্থায় ঘণ্টায় সর্বোচ ২১ কিলােমিটার বেগে টানা ২৫ মিনিট উড়তে সক্ষম এই ড্রোনটি।পারে ড্রোনটি । ওড়ার সময় শব্দ এতটাই কম হয় যে, সর্বোচ্চ ১০০ মিটার উচ্চতায় ওড়ার সময় ড্রোনটি দেখে অনেকেই একটি ছােট একটি পাখি ভেবে ভুল করতে পারেন।

একটি ব্ল্যাক হর্নেট সর্বনিম্ন -১০ ডিগ্রি থেকে সর্বোচ্চ +৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, জিপিএস কাজ করে না এমন জায়গাতেও উড়তে পারে অনায়াসে।ফলে এর মাধ্যমে কোনো দুর্গম গুহায় বসে শত্রুপক্ষ থাকা বা আটকে পড়া শ্রমিক কিংবা অভ্যন্তরীণ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এই ড্রোনটিতে রয়েছে ৩টি উন্নতমানের বিশেষ ক্যামেরা যেগুলো দিনে এবং রাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে সক্ষম।

এর একটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে, যদি শত্রুপক্ষের কাছে কোন ভাবে ধরা পড়ে যায় তবে শত্রুপক্ষের বোঝা সম্ভব নয় যে এর মাধ্যমে তাদের কোন কোন ফাঁস হয়েছে। কারণ ব্ল্যাক হর্নেটকেএমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, এটি কেবল কন্ট্রোলার ডিভাইসেই লাইভ ভিডিও ও স্থিরচিত্র প্রেরণ করে থাকে, ড্রোনটির আলাদা কোনাে স্টোর নেই। যেখানে ভিডিও সংরক্ষিত থাকবে ।

ব্ল্যাক হর্নেটের কন্ট্রোল অপারেটর ডিভাইস থেকে একাধিক ড্রোন একইসাথে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আবার চাইলে দুজনও অপারেটর একইসাথে একটি ড্রোন থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এটি যেমন কন্ট্রোলার ডিভাইস দিয়ে কোনাে ব্যবহারকারী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, ঠিক তেমনই কন্ট্রোলার ডিভাইসে ম্যাপ যুক্ত করে দিলে সেই ম্যাপ অনুযায়ীস্বয়ংক্রিয় ভাবেও উড়তে পারে।

প্রতি সেকেন্ডে ২০ পা-এর দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে সামরিক এই ড্রোনটি।শত্রুর এলাকায় পৌছে নীরবেই ভিডিও ও ছবির মাধ্যমে তথ্য জোগাড় করায় সক্ষম।এটি FLIR সংস্থার মতে, এই ড্রোন ব্যবহার করে যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে শত্রুর চেয়ে অনেক ধাপ এগিয়ে থাকার পাশাপাশি শত্রুর ফাঁদ থেকে আগাম সতর্ক হওয়া সম্ভব। বিশেষ প্রযুক্তির উন্নত ড্রোনগুলাে সহজেই রাডার উপেক্ষা করে শত্রুঘাটিতে হামলা করে মুহূর্তেই যুদ্ধের মােড় বদলে দিতে পারে। তবে ড্রোনের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে।

এটি যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে আক্রমণের কাজে ব্যবহৃত হয়, তেমনই এর মাধ্যমে শত্রুপক্ষের ওপর গােপন নজরদারিও করা যায় ।এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবর নেওয়া, দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় সাহায্য পৌছানাে, সিনেমার দৃশ্য ধারণ, ফটোগ্রাফি ইত্যাদির কাজেও আজকাল ড্রোনের ব্যবহার বহুল প্রচলিত।ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানােতে বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা ফলে ড্রোনটির ব্যবহারকারী চমৎকার কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন।

যেমন : কোনাে কারণে যদি কন্ট্রোলার ডিভাইসের সাথে ড্রোনটির যােগাযােগে ব্যাঘাত ঘটে, তবে এটি যেখান থেকে ওড়ানাে হয়েছিল ঠিক সেই জায়গাতে চলে আসবে। তা ছাড়া এটি ওড়ানােও বেশ সহজ, মাত্র ৩০-১২০সেকেন্ড সময় নেয় যেকোনাে মিশনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হতে

অন্যান্য ড্রোনের খরচ তুলনামূলক কম হওয়াতে আন্তর্জাতিকভাবে ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানাের বেশ চাহিদা তৈরি হয়েছে হওয়াটাও স্বাভাবিক, কারণ দুর্গম অঞ্চল বা দুর্ধর্ষ অবস্থানের ওপর গােপন নজরদারিতে এটি অতুলনীয়।

দ্য ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানো ড্রোন টির ব্যবহার :

ব্রিটিশ সেনারা ২০০২ সালের পর আফগানিস্তানে গিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন, এবং তার সমাপ্তি ঘটে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মধ্যে । প্রায় ১২ বছর ধরেই আফগানিস্তানের যুদ্ধরত ব্রিটিশ সেনারা বিভিন্ন সময়ে আফগানিস্তানের আল-কায়দা এবং তালেবানদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল।

তাদের অধীনে সংঘটিত অপারেশনগুলোর সাংকেতিক নাম ছিল 'অপারেশন হেরিক'। এবং ২০১২ সালের পরে সার্ভিসে আসা ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানো এই ড্রোনগুলো ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয় অপারেশন হেরিকের প্রায় প্রতিটি মিশনেই।

কোনো অপারেশনে যাওয়ার আগে এই ব্ল্যাক হর্নেট ড্রোনটির সাহায্যে সহজেই শত্রুপক্ষের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া, পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে একজন সৈন্যের পরবর্তী পজিশন নেওয়া সহ আফগান সিভিলিয়ানদের মাঝে ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকা শত্রুদের শনাক্ত করার কাজে বিশেষ ভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল এই ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানো। 

এই ড্রোনের মাধ্যমে যে কেবল পরিষ্কার লাইভ ভিডিও বা স্থিরচিত্রই পাওয়া যায় তা নয়, এর মাধ্যমে শত্রুপক্ষের লুকিয়ে রাখা মাইনও শনাক্ত করা সম্ভব । 

ছোট একটি ড্রোনের এত বেশি সুবিধার জন্যই ব্রিটিশ সেনাদের কাছে এই ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানো আফগানিস্তানে যুদ্ধ-সরঞ্জামের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। এর পাশাপাশি কার্যকর ন্যানো ড্রোন হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবেও এর কদর বৃদ্ধি পায়।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ

Students