যে কারণে 'নাসা ' মঙ্গল গ্রহে "ইনজেনুইটি" নামে এই হেলিকপ্টারটি পাঠিয়ে ছিল।

নাসার মার্স হেলিকপ্টার " ইনজেনুইটি" যেটি দেখতে হেলিকপ্টার এর মতই কিন্তু  এটিই ছিল  মহাকাশের   লাল গ্রহ মঙ্গলের  উড়ানো প্রথম বিমান বা মহাকাশযান ।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

এটি ২০২০ সালে নাসার  রোভার এজেন্সিতে মঙ্গল গ্রহের   মিশনের অংশ হিসাবে  যাত্রা শুরু করেছিল ।  এই রোভারটি  18 ফেব্রুয়ারি, 2021 তারিখে মঙ্গল গ্রহের একটি যায়গা বিজ্ঞানিরা যেটার নাম দিয়েছিলেন " জেসেরো ক্র্যাটারে " এই স্থানে  অবতরণ করেছিল - 

" জেসেরো ক্র্যাটার " এই স্থান টিকে বিজ্ঞানীরা মনে করেন একটি প্রাচীন বদ্বীপ যেখানে অতীতে  মঙ্গলের পৃষ্ঠে জীবনের প্রমাণ ধরে রাখতে পারেছিল। 

" ইনজেনুইটি" মঙ্গল গ্রহে পাঠানোর মূল যে কারণ ছিল!

এই  মার্স হেলিকপ্টার ইনজিনিউটি, বা "মার্সকপ্টার" যে নামেই ডাকা হোক না কেন এই  হেলিকপ্টারটি কিন্তু  পৃথিবীতে আমারা যে হেলিকপ্টার দিখেছি তার মত নয় বা এতে কোনো মানুষ পরিবহন করা যায় না। এটি  পৃথিবীতে থাকা হেলিকপ্টারগুলির থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। 

এই হেলিকপ্টারটি মঙ্গল গ্রহে পাঠানোর মূল কারণ ছিল যে পরীক্ষা করে দেখা আসলে হেলিকপ্টার এর মত কোনো যান চালানো সম্ভব কিনা।

তাছাড়া এর সাথে এটাও পরীক্ষা করে দেখা যাবে যে মঙ্গল গ্রহ বাতাসে পরিমাণ ঠিক কতটুকু কারন একটি হেলিকপ্টার চালাতে হলে পৃথিবীতে যতটুকু বাতাস আছে তার মত বা তার চেয়ে কম বাতাস প্রয়োজন। এর এর জন্যই বিজ্ঞানীরা এর ছোট হেলিকপ্টারটি বানিয়েছিলেন। এবং  তা দেখাও হয়েছিল।  

এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে  মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলীয় আয়তন পৃথিবীর তুলনায় 1% কম।

মঙ্গল গ্রহে এই  হেলিকপ্টার উড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য চ্যালেঞ্জ ছিল   বায়ু,  ধুলো কনা,ও  ঝড় এগুলো  নিশ্চিত করা। এবং সৌরশক্তি থেকে পর্যাপ্ত শক্তি রয়েছে কিনা

ইনজেনুইটি" হেলিকপ্টারটি  ঠিক কত বড় ছিল?

এই " ইনজেনুইটি" হেলিকপ্টারটি  খুবই  ছোট একটি  হেলিকপ্টার, যার ওজন মাত্র 4 পাউন্ডের নিচে।  অর্থাৎ 1.8 কিলোগ্রাম। আর লম্বা ছিল 19 ইঞ্চি (48 সেন্টিমিটার) ।  কিন্তু মঙ্গল গ্রহে  এর ওজন হয়েছিল  মাত্র 1.5 পাউন্ড।  ( অর্থাৎ 0.68 কেজি) । 

আর  এর কার্বন-ফাইবার রোটার বা "ব্লেড" বা আমরা যেটাকে ডানা বলে থাকি সেটি  ছিল  মাত্র 4 ফুট (1.2 মিটার)।  তাছাড়া  এটির ডানার উপরে   একটি ছোট সৌর প্যানেল বসানো আছে আর  এর মধ্যেখানে  রয়েছে  একটি  রিচার্জাররেবল ব্যাটারি ।  

মঙ্গল গ্রহের ভূপৃষ্ঠ থেকে এই হেলিকপ্টারটি চালিয়ে উপরে তুলা এই  "হেলিকপ্টার টিমের" জন্য যদিও একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, তার পর ও চ্যালেঞ্জটি সফল হয়েছিল। 

" ইনজেনুইটির " ফ্লাইট বা উড্ডয়ন পরীক্ষা গুলো। 

" ইনজেনুইটি " প্রথমবারের মতো 19 এপ্রিল সফলভাবে যাত্রা শুরু করে।

এর প্রথম উড্ডয়নটি মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে 10 ফুট ( অর্থাৎ 3 মিটার) উপরে উঠতে পেরেছিল ।  পুরো ফ্লাইটটি প্রায় 40 সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল।

দ্বিতীয় উড্ডয়নটি 52 সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল এবং মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে পৃষ্ঠ থেকে 16.5 ফুট (5 মিটার) পর্যন্ত  উড়তে সক্ষম হয়েছিল। যেখানে এটি নীচে নামার আগে এটি কাত হয়ে পাশের দিকে চলে গিয়েছিল।  

2021শে  25  এপ্রিল, এটির  তৃতীয় ফ্লাইট করা  হয় এবং 29 এপ্রিল, হেলিকপ্টার চতুর্থ ফ্লাইটের চেষ্টা করে

কিন্তু  দুর্ভাগ্যবশত,চতুর্থ ফ্লাইট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হয়নি  হেলিকপ্টারটি "ফ্লাইট মোডে" স্থানান্তর করতে ব্যর্থ হওয়ায় এই দিন চতুর্থ ফ্লাইট হয়নি।  যাইহোক, যখন পরবর্তীতে  মিশন দলটি পৃথিবী থেকে পাঠানো কমান্ড সিকোয়েন্সটি পরিবর্তন করেছিল,  তখন এই  কমান্ড সিকোয়েন্সটি হেলিকপ্টার চালানোর জন্য কাজ করেছিল।  আর এটি ছিল  30 এপ্রিল যেটি সফলভাবে চতুর্থ ফ্লাইট সম্পন্ন করে। 

এটি এই ফ্লাইটের মাধ্যমে নতুন রেকর্ডে পৌঁছায়, যার সর্বোচ্চ গতি ছিল 8 মাইল (13 কিলোমিটার), 872 ফুট (266 মিটার)। এবং মোট 117 সেকেন্ডের জন্য উড়ছিল।  কিন্তু আগের উচ্চতার রেকর্ড  16.5 ফুট (5 মিটার) এটি ভাংতে পারেনি। 

7 ই মে তার পঞ্চম ফ্লাইটে, হেলিকপ্টাটি   আবার 16.5 ফুট (5 মিটার) উপরে উঠেছিল, ফুটে  423 ফুট (129 মিটার) দক্ষিণে উড়ে গিয়েছিল তারপর 33 ফুট (10 মিটার) এর নতুন রেকর্ডে আরো উপরে উঠেছিল এবং অবতরণের আগে কিছু ছবি তুলেছিল।  

এর আগে নাসা যে সফল  মিশন ছিল এবং যে রোভার বা রোবটগুলো মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়েছিল।

এর আগে   2004 সালের জানুয়ারিতে, স্পিরিট এবং অপরচুনিটি  নামে ভূতত্ত্ববিদ দুটি রোবোট মহাকাশের  লাল গ্রহ মঙ্গল এর  উপরিভাগে   অবতরণ করে। 1997 সালে  মার্স পাথফাইন্ডার রোভারের চেয়ে অনেক বেশি গতিশীলতার সাথে, এই রোবটিক এক্সপ্লোরার মার্টিয়ান অর্থাৎ মঙ্গল গ্রহের  পৃষ্ঠের উপর দিয়ে মাইল এর পর মাইল পথ ধরে যাওয়ার পর মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করার পর , মঙ্গলের  ভূতত্ত্ব পরিচালনা করেছিল এবং বায়ুমণ্ডলীয় পর্যবেক্ষণ করেছিল।

বিজ্ঞান যন্ত্রের অভিন্ন, অত্যাধুনিক সেট বহন করে, উভয় রোভারই প্রাচীন মার্টিয়ান পরিবেশের প্রমাণ পেয়েছে যেখানে মাঝে মাঝে ভেজা এবং বাসযোগ্য অবস্থার অস্তিত্ব ছিল।

মিশনের বৈজ্ঞানিক লক্ষ্যগুলির মধ্যে প্রথমটি ছিল মঙ্গল গ্রহে অতীতের জলের ক্রিয়াকলাপের সংকেতের জন্য বিস্তৃত পাথর,  মাটির সন্ধান এবং বৈশিষ্ট্য যাচাই-বাছাই করা । রোভারগুলি দ্বারা  মঙ্গল গ্রহের বিপরীত দিকের সাইটগুলি পরিক্ষা  করা হয়েছিল যা দেখে মনে হয়েছিল যে  অতীতে তরল পানির অস্তিত্ব রয়েছিল  ।

 স্পিরিট গুসেভ নামে রোবটটি প্রথম একটা  গর্তে  অবতরণ করে, এবং এর দ্বারা  একটি সম্ভাব্য প্রাক্তন হ্রদ পাওয়া যায়।  অপরচুনিটি নামে রোবটটি  মেরিডিয়ানি প্লানামে একটা জায়গায় যায়, এবং ওই জায়গায় যেখানে খনিজ পদার্থ  সহ মঙ্গলের একটি ভেজা জায়গার অস্তিত্ব পায়।

প্রতিটি রোভার একটি ল্যান্ডিং  ক্রাফ্টের এয়ারব্যাগ দ্বারা সুরক্ষিত ছিল  যার কারণে এর অবতরণে সময়  কোনো সমস্যা হয় নি। 

 রোভারগুলি মঙ্গলের  ছবি তোলার জন্য বেরিয়ে পড়েছিল , এবং এই  রোবার দ্বারা যতটা ছবি তুলা হয়েছিল সবটাই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল । এই চিত্রগুলি বিজ্ঞানীদেরকে মঙ্গলগ্রহের অতীতের জলের  অস্তিত্ব সম্পর্কে অনেক কিছুই প্রদান করেছিল।  তাছাড়া  ভূতাত্ত্বিক লক্ষ্য নির্বাচন করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিয়েছিল এই রোভার । 

এই রোভার  অবতরণের পর থেকে এখনও অনেক ছবি বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আসছে। এই দুই  রোভারটিব লক্ষ লক্ষ মঙ্গল গ্রহের  পাথর, উচু নিচু ভূখণ্ডের  অংশের ছবি এবং মাটির পৃষ্ঠের বিশদ মাইক্রোস্কোপিক ছবি পাঠিয়েছে।  এর চারটি ভিন্ন স্পেকট্রোমিটার মার্টিয়ান শিলা এবং মাটির রাসায়নিক এবং খনিজবিজ্ঞান  গঠন  সম্পর্কে অতুলনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে। এতে  বিশেষ সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল যেটি 

শিলা ঘর্ষণ করতে  বা কাঁটতে,  সরাতে  ব্যবহার করতে পারে, এমন সিস্টেম এর রোবট  যা আগে কখনও অন্য গ্রহে পাঠানো হয়নি, এর দ্বারা বিজ্ঞানীরা তাদের অভ্যন্তরীণ অংশগুলি পরীক্ষা করতে   পাথরের ধুলো এবং আবহাওয়াযুক্ত পৃষ্ঠের নীচে দেখতে পারেন। 

রোভার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে,  বিজ্ঞানীরা একটি প্রাচীন অতীতকে পুনর্গঠন করতে পেড়েছিলেন ।  এর থেকে তারা ধারণা করেছিলেন যে  মঙ্গল গ্রহ অতীতে  পানিতে ভেসে ছিল। স্প্রিট  এবং অপরচুনিটি দুটি রোভারই   অতীতের  ভেজা অবস্থার প্রমাণ পেয়েছে যা সম্ভবত মাইক্রোবায়াল জীবনকে সমর্থন করতে পারে। 

দুটি রোভার দ্বারাই  হ্রদের প্রমাণ পাওয়া গেছে যা বাষ্পীভূত হয়ে সালফেট সমৃদ্ধ বালু তৈরি করেচিল।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ

I am a simple blog Writer.