ডিজিটাল মার্কেটিং করার কার্যকরী কৌশল

বর্তমান যুগে অনলাইন মার্কেটিং এর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর তাই ব্যবসায়ের পণ্য বা সেবা মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং হতে পারে সেরা মাধ্যম। ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়ের প্রসার ঘটাতে ডিজিটাল মার্কেটার দের খুজে থাকেন। তাই দক্ষ ডিজিটাল মার্কেটারদের ব্যাপক চাহিদা। আপনি একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার হয়ে আপনার ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার হওয়ার জন্য প্রথমেই ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমগুলো সম্পর্কে জানতে হবে।ডিজিটাল মার্কেটিং এর কার্যকরী মাধ্যমগুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

ডিজিটাল মার্কেটিং কি?

ব্যবসায়ের প্রসারের জন্য ডিজিটাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা প্রচার করাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে।

ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করবেন?

  • ব্যবসায়ের জন্য টার্গেটেড কাস্টমার তৈরী।
  • অল্প সময়ে অধিক কাস্টমার পাওয়া সম্ভব।
  • ঘরে বসেই মার্কেটিং করতে পারবেন।
  • সহজেই কাস্টমারের চাহিদা বা ফিডব্যাক পাওয়া সম্ভব।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী মাধ্যম:

  1. Social Media Marketing (SMM)
  2. Search Engine Optimization (SEO)
  3. Affiliate Marketing
  4. Email Marketing
  5. Online Advertising
  6. Content Marketing

Social Media Marketing (SMM) :

বর্তমানে আমরা সবাই বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকি। যেমন: 

  • ফেসবুক
  • টুইটার
  • ইনস্টাগ্রাম
  • ইউটিউব 
  • গুগল প্লাস ইত্যাদি।

এই সামাজিক মাধ্যমগুলো কে কজে লাগিয়ে ব্যবসায়ের পণ্য বা সার্ভিরের প্রচার- প্রচারণা চালানো কেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলে। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক চাহিদার কারণে ব্যবসায়ের প্রসারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং  একটি কার্যকরী মাধ্যম। 

ব্যবসায়ের পণ্য বা সেবা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুদের কাছে অথবা বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করে অধিক মানুষের কাছে পৌছানো যায়।

SMM ২ ভাবে করা যায়:

  1. Paid SMM
  2. Free SMM

Paid SMM: এক্ষেত্রে ফেসবুক কে কিছু অর্থ প্রদান করে টার্গেটেড স্থান এবং মানুষের কাছে পণ্যের বিঙ্গাপন দেওয়া হয়।

Free SMM: এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পাবলিক গ্রুপ বা পাবলিক পেইজে পণ্য বা সেবার লিংক শেয়ার করে প্রচারনা চালানো যায়। আবার কোনো পোস্টের কমেন্টেও পণ্যের লিংক দিয়ে প্রচার করা যায়। এক্ষেত্রে ফেসবুক কে কোনো অর্থ প্রদান করতে হয় না। 

Search Engine Optimization (SEO): 

একটি ওয়েবসাইটকে সার্চ ইন্জিনের প্রথম পৃষ্ঠায় নিয়ে আসার জন্য যেসব প্রযুক্তিগত কৌশল অবলম্বন করা হয় তাকে এসইও বলে।

অর্থাৎ এসইও এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে রাংক করানো হয় যাতে করে কেউ কিছু সার্চ করলে সহজেই ওয়েবসাইটটি সম্পর্কে জানতে পারে।

 SEO ২ প্রকারঃ

১। অর্গানিক SEO: এসইওর সকল নিয়ম কানুন অনুসরন করে ওয়েবসাইটকে একটি নির্দিষ্ট কী ওয়ার্ডের ভিত্তিতে সার্চ ইন্জিনের প্রথম পৃষ্ঠায়  আনার কৌশলই হলো অর্গানিক এসইও।

অর্গানিক SEO ২ প্রকারঃ

  1. On Page SEO
  2. Off Page SEO

একটি ওয়েববসাইট কে তৈরী করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন হয় সবই অন পেইজ এসইওর অন্তর্ভুক্ত।

আর অফ পেইজ এসইওর মাধ্যমে ওয়েবসাইটের মার্কেটিং করা হয়, অর্থাৎ ওয়েবসাইটটি কে সর্বত্র প্রোমোট করাই হলো অফ পেইজ এসইও।

২। পেইড SEO: গুগল কোম্পানি কে অর্থ প্রদান করে ওয়েসাইটকে সার্চ ইন্জিনের প্রথমে পেইজে নিয়ে আসায় হলো পেইড এসইও। গুগলে সার্চ দেওয়ার পরে প্রথমে যে ওয়েবাসাইগুলোর পাশে (Ad) লেখা থাকে সেগুলো পেইড এসইওর মাধ্যমে করা থাকে।

এসইওর মধ্যে আরও ২ টি সেক্টর থাকে:

  1. White hat SEO
  2. Black hat SEO

ওয়েবসাইট রাংক করার জন্য গুগল এর সকল নির্দেশিনা অনুসরণ করে এসএইও করা হলো হোয়াইট হ্যাট এসইও।

আর এসইওর সকল নিয়ম ভঙ্গ করে অন্যভাবে ওয়েবসাইটের রাংক বৃদ্ধি করা হলো ব্লাক হ্যাট এসইও।

হোয়াইট হ্যাট এসইও তে সঠিক নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় বলে সকলে এই পদ্ধতিতেই এসইও করে থাকে।

Affiliate Marketing: 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর এমন একটি মাধ্যম যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সেল জেনারেট করা। অর্থাৎ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা কোনো সংস্থার পণ্যকে প্রোমোট করে ক্রয়ের জন্য জনগণকে আগ্রহী করে এবং পণ্য বিক্রয়ের উপর তারা কমিশন পেয়ে থাকে। 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কীভাবে করবেন?

১. প্রথমেই আপনি একটি ওয়েবসাইস বা ব্লগ খুলতে পারেন। 

২. বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেমন: ফাইভার, আপওয়ার্ক এরকম অনেক মার্কেটপ্লেসে প্রচুর পরিমাণে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর কাজ পাওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন জনপ্রিয় ওয়েবসাইট যেমন: Amazon, Flipkart, GoDaddy ইত্যাদি সাইটগুলোর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করে তাদের পণ্যগুলোর অ্যাফিলিয়েট লিংক আপনার ওয়েবসাইটে যুক্ত করে বিক্রয় করতে পারেন। 

৩. গ্রাহক বা ক্রেতা পাওয়ার জন্য আপনি পণ্যগুলো সম্পর্কে ভালো ভালো রিভিউ লিখে দিতে পারেন। বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য রিভিউ অনেক কার্যকর হবে।

৪. আবার একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে তার মাধ্যমেও পণ্যগুলো প্রচার এবং বিক্রয় করতে পারবেন।

৫. এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম যেমন: Facebook, Twitter, Instagram, Pinterest এ পণ্যগুলো শেয়ার করে প্রচার করতে পারবেন।

৬. এভাবে সকল বিক্রয়ের উপর কমিশন পেয়ে আয় করতে পারবেন। যত বেশি বিক্রি করতে পারবেন ততই আপনার আয়ের পরিধি বাড়বে।

Email Marketing: 

ব্যবসায়ের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে টার্গেটেড কাস্টমারদের অবগত করার জন্য ইমেইল মার্কেটিং সেরা একটি মাধ্যম।

অর্থাৎ টার্গেটেড গ্রাহকদের কে ইমেইলের মাধ্যমে ব্যবসায়ের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জানানো কেই ইমেইল মার্কেটিং বলে। এক একজন গ্রাহককে এক এক করে মেইল করা অনেক কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ। তাই ইমেইল মার্কেটিং করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফ্রি এবং পেইড টুলস রয়েছে যার মাধ্যমে একসাথে হাজার হাজার মানুষের নিকট ইমেইল পাঠানো যায়। কিছু ভালো ভালো ফ্রি টুলস রয়েছে যেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে অার অর্থ খরচ করে পেইড টুলস ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। নিম্নে ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য কিছু ফ্রি টুলস এর নাম দেওয়া হলো:

  • Mailchimp
  • FeedBurner
  • MailerLite
  • Drip
  • SendPress

ইমেইল মার্কেটিং করার জন্য যেসব বিষয় প্রয়োজন :

  • নিজের একটা বিসনেস ইমেইল অাইডি থাকতে হবে।
  • ইমেইল এর জন্য কিছু টুলস এ রেজিস্ট্রেসন করতে হবে।
  • টার্গেটের গ্রাহক দের ইমেইল লিস্টিং করতে হবে।
  • বিভিন্ন টুলস ব্যবহার করে টার্গেটেড গ্রাহকদেরকে  ইমেইল করে পাঠিয়ে দিতে হবে।

Online Advertising:

অনলাইনের মাধ্যমে যেকোনো কিছুর বিঙ্গাপন দেওয়াকেই Online Advertising বলা হয়।

Oniline advertising এর ধরণ:

  • CPC (Cost Per Click)
  • CPA (Cost Per Action)
  • CPV ( Cost Per View)
  • Display Advertising

CPC হচ্ছে অনলাইনে কোনো পণ্যের বিঙ্গাপন দেওয়ার পর Advertiser প্রতি ক্লিকে কত ডলার বা টাকা আয় করতে পারবে।

CPV  হচ্ছে Cost Per View. এখানে বিঙ্গাপনদাতা তার বিঙ্গাপনটি কতজন ভিজিটর ভিউ করেছে বা কতক্ষণ সময় ধরে ভিউ করেছে তার উপর ভিত্তি করে আয় করতে পারবে।

CPA হচ্ছে বিঙ্গাপনদাতা যদি কোনো বিঙ্গাপনের উপর একটি অ্যাকশন কম্পিলিট করতে পারে তাহলে সেই অনুযায়ী তার আয় হবে।

Display Advertising হচ্ছে প্রচারমূলক বিলবোর্ড বা ব্যানার এর মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিঙ্গাপন দেওয়া যেগুলো গুগল অ্যাডওয়ার্ডস এর মাধ্যমে করা হয়।

Content Marketing:

কন্টেন্ট মার্কেটিং করার জন্য অাপনাকে প্রথমেই কোনো কনটেন্ট তৈরী করতে হবে। কনটেন্ট বলতে কোনো টেক্সট, ছবি, আর্টিকেল, ভিডিও ইত্যাদি কে বুঝায়। প্রতিদিন প্রায় চার মিলিয়ন কনটেন্ট পাবলিশ হচ্ছে। তাই কনটেন্ট মার্কেটিং করে আপনি প্রচুর টাকা আয় করতে পারেন।

কনটেন্ট মার্কেটিং কীভাবে করবেন?

১. ইমেইল লিস্ট তৈরী করে আপনার কনটেন্টটি সপ্তাহে একটি করে গ্রাহকদের নিকট ইমেইল পাঠাতে পারেন।

২. সোশ্যাল মিডিয়াতে কন্টেন্ট গুলো শেয়ার করতে পারেন।

৪. একই দিনে একই কনটেন্ট বার বার শেয়ার করা থেকে বিরত থাকবেন। পোস্টগুলো শেয়ার করার সময় নতুন কোনো ছবি দিয়ে একটি শর্ট ডেসক্রিপশন লিখতে পারেন।

৩. যদি কোনো ভিডিও কনটেন্ট শেয়ার করেন তাহলে একটি শর্ট ক্লিপ তৈরী করতে পারেন, সাথে পুরো ভিডিও লিংকটি দিয়ে দিবেন।

৪. বিভিন্ন অনলাইন কনটেন্ট রিলেটেড গ্রুপগুলোতে জয়েন করুন এবং সেখানে আপনার কনটেন্টগুলো শেয়ার করুন। তবে স্প্যামিং করা থেকে বরত থাকবেন।

৫. ভিডিও কন্টেন্ট মার্কেটিং এর জন্য ইউটিউব সবচেয়ে বেশি কার্যকর হবে।

৬. পেইড প্রোমোশন সবচেয়ে কার্যকরী কন্টেন্ট প্রোমোশন। এর মাধ্যমে আপনি সাথে সাথেই ভিজিটর পাবেন এবং টার্গেটেড অডিয়েন্স পাবেন।

 

পরিশেষে :

আশা করি, যারা সফল ডিজিটাল মার্কেটার হয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাচ্ছেন অথবা দ্রুত ব্যবসায়ে সফলতা চান, তাদের জন্য আর্টিকেলটি বেশ সহায়ক হবে।

আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা যদি উপকৃত হয়ে থাকেন বা ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন।

ধন্যবাদ।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ