ক্যারিয়ার গঠনের মূল্যবান পরামর্শ [জানুন বিস্তারিত]

মানুষের জন্মলগ্ন থেকে জীবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত নানা জটিলতা সমস্যাসঙ্কুল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে হাঁটতে হয়। তবুও মানুষ সব সমস্যার সমাধান করেও জীবন ধারন করছে।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

কিন্তু পরিকল্পনাহীন জীবন যাপনের কোন মূল্য নেই। সেই যখন পৃথিবীতে জন্মগ্রহন করেছি তবে সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে ক্ষতি কি?

তাই আমাদের প্রয়োজন সুন্দর একটি পরিকল্পনা মাফিক ক্যারিয়ার গঠন করতে যা আগামীদিনে বেঁচে থাকার এক উন্নত হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। যারা দ্বারা জীবনের সব প্রতিকূল পরিস্থিতী কাটিয়ে এক নব জীবিকার প্রারম্ভিক সূচনা করতে পারে।

ক্যারিয়ার কি বা কাকে বলে:- 

সাধারনত: ক্যারিয়ারকে আমরা পেশা বলে থাকি। কিন্তু একটু যদি বিস্তারিত বলা যায় তবে বলা যেতে পারে যে,  আমাদের মস্তিষ্ক প্রসূত ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজের তথা মানবকল্যানের ক্ষেত্রে অর্থ উপার্জনের পন্থাকে ক্যারিয়ার বলতে পারি।

সহজ কথায় বলা যায় জীবন জীবিকার প্রশ্নে খেয়ে পরে একটি পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করে অর্থ আয়ের একটা রাস্তা তৈরী হয় সেই পদ্ধতিকে বলে পেশা। আর এই পেশাকে সুসংগঠিতভাবে ক্যারিয়ার হিসেবে আমরা মর্যাদা দিয়ে থাকি।

অর্থাৎ ক্যারিয়ার হল এমন এক সুন্দর পরিকল্পনা মাফিক কর্ম জীবন যার মাধ্যমে নিজস্ব অর্থ উপার্জনের সাথে সাথে মানব কল্যানকর কিছু কর্মে নিজেকে পরিব্যপ্ত করা।

ক্যারিয়ার গঠনের উদ্দেশ্য :-

আমরা এই সারা পৃথিবীর অসংখ্য কোটি কোটি মানুষ বেঁচে আছি এক অর্থনৈতিক পরিমন্ডলের উপর দাঁড়িয়ে। অর্থ ছাড়া মানুষের পারিবারিক সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক জীবন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে যায়।

তাই সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক কাঠামোর যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি একজন মানুষের ক্ষেত্রে তার পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। তাই প্রতিটি পরিবারের বয়সানুক্রমিক প্রতিটি মানুষকে অর্থনৈতিক চিন্তাভাবনা করতে হয়। যদি তাই হয় তবে প্রতিটা মানুষকে অর্থ উপার্জনের একটা পথ খুঁজতে হয়। আর এই পথ খুঁজতে গেলে তার একটা পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে।

আর সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করতে একটা সুন্দর পেশায় নিজেকে যুক্ত হতে হবে। তাই ক্যারিয়ার গঠনের মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হল সুন্দর উপায়ে একটি সুন্দর মাধ্যমের মধ্য দিয়ে নিজ দক্ষতা,সামর্থ্য ও সাধ্যমত অর্থ উপার্জন করে পরিবার কল্যাণ তথা সমাজ কল্যানের প্রয়োজনে কাজে লাগানো। তাতে নিজের,পরিবারের ও সমাজের আরো কিছু মানুষের কল্যান হয় ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চাঙা হয়।

ছোট থেকে ক্যারিয়ার গঠন :-

আমরা প্রতিটা পরিবারের মা বাবা ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শেখাই একটা উদ্দেশ্য নিয়ে। কেউ ভাবেন ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে তার ব্যবসায়ের কাজে লাগাবে,কেউ কেউ ভাবেন তাদেরছেলে মেয়েদের শিক্ষক,ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার অথবা আরো প্রফেশনাল কিছু কাজে নিযুক্ত করবো।

আসলে এ গুলো হল বাবা মায়ের অলীক কল্পনা। আসলে আমরা জানি না একটা সন্তান সে কি প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহন করেছে। সর্বাগ্রে আমাদের জানতে হবে ছেলে মেয়েদের চিন্তাধারা বা ভাবনা কোনদিকে। সে কোন বিষয়ে বেশি ইন্টারেক্টিভ। আমরা ভাবছি ছেলেকে ডাক্তারী পড়াবো কিন্তু ছেলের মানসিকতা হয়তো তা নয়,সে আইনজীবী বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। তাহলে জোর করে যখন আমরা তাকে ডাক্তারী পড়ায় চাপ দেবো আদৌ সে সেটাতে সাকসেস হতে পারবে না। উলটে তার জীবনের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

তাই নব শিক্ষানবিশদের নিজস্ব চিন্তাধারা বা ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের উচিত ওর চিন্তাধারাকে বাস্তবায়িত করতে। তাহলে জীবনের একটা লক্ষ্যে ওরা পৌঁছাতে পারবে।

এবং সুসংবদ্ধ সুন্দর একটিভ একটা পেশাগত কর্মনিয়োগের মধ্য দিয়ে জীবনের সাফল্য লাভের স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে। তাই ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে কোন চাপ নয় যার দ্বারা যেটা হওয়া সম্ভব তাকে সেই কাজটা দিয়ে পরখ করে দেখতে হয়। অবশ্য এটাতে ক্যারিয়ার গঠনের জয় সুনিশ্চত করে।

ক্যারিয়ার গঠনের পরিকল্পনা:-

আজ পর্যন্ত পরিকল্পনা বিহীন কোনকাজে সাফল্যলাভ হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। কারন আমরা জানি যেকোন কাজ করতে গেলে তার পূর্ব পরিকল্পনা থাকবে, তাই পরিকল্পনাহীন কোন কাজের কথা আমরা ভাবতেই পারি না। অতএব আমরা ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রেও সেই একই নিয়ম এপ্লাই করবো। কারন পরিকল্পনাহীন ক্যারিয়ার কখনো হতে পারে না।

সে কি ব্যবসা কি চাকরি কিংবা কোন সামাজিক কাজকর্ম। প্রতিটা কাজে পরিকল্পনা চাই,সাধনাও অধ্যবসায় চাই। আর সব থেকে বড় জিনিস ধৈর্য চাই। সবার আগে তাই পরিকল্পনা করতে হবে আপনি কিংবা আপনার পরিজনকে যে আপনারা কোন পেশাকে প্রাধান্য দিতে চাইছেন। যে পেশাটাকে প্রাধান্য দিলেন ঐ পেশা সংক্রান্ত বিষয়ে ধারণা নিন, ভাল করে জানুন।

উক্ত পেশায় কতটা লাভ কিংবা লোকশান ইত্যাদি। তাই যেকোন পেশা বা কর্ম করার সর্বাগ্রে পরিকল্পনা একটা ভাইটাল পয়েন্ট। 

ক্যারিয়ার গঠনের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা:-

মানুষ তো নানা কাজের নানা পরিকল্পনা করে ,কিন্তু অনেক সময় তা বাস্তবায়িত হয় না। কারন পরিকল্পনা গুলো বাস্তবমুখী হয় না বলেই স্বার্থকতা আসে না। তাই পরিকল্পনা গ্রহনের ক্ষেত্রেও আমাদের অনেক বিষয় জানতে হয় ও ভাবতে হয়।

1. ক্যারিয়ার গঠনে সফল ব্যক্তিদের উপদেশ ও পরামর্শ :-

যারা পেশাগত দিক দিয়ে সফল সেইসব ব্যক্তিবর্গের সুপরামর্শ ও উপদেশ গ্রহন অবশ্য কর্তব্য। কারন তাদের মধ্যে উক্ত পেশার ভাল মন্দ নানা অভিজ্ঞতা বিরাজ করছে। তাদের দেওয়া ধারণা উপদেশ পরামর্শ ক্যারিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহন করে এটা সুনিশ্চিত। তাই অভিজ্ঞ মানুষের সংস্পর্শে আসাটা জরুরী।

2. কর্ম প্রতিষ্ঠানে বার বার গমন :-

যে পেশা গ্রহনে আপনি আগ্রহী ঐ পেশা কেন্দ্রে বার বার গিয়ে তাদের কর্ম পদ্ধতি পরিনর্শন করা ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা। ঐ কেন্দ্রের কার কি কাজ, কে কিভাবে তার কর্ম সম্পাদন করছে তার একটা ধারণা আপনাকে নিতে হবে। এবং নিজের মনে মনে পরিকল্পনাটিকে বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করতে হবে।

3. নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পেশা গ্রহণ :-

নিজের দক্ষতা ও ক্ষমতা অনুযাই পেশাকে বেছে নিতে হবে। আপনার ক্ষমতার বাইরের কোন পেশাকে আপনি নেবেন না। ধরুণ আপনি ব্যবসাকে পেশা করতে চান, ভাবলেন চায়ের দোকান করবেন, তো একার ক্ষেত্রে একটা ছোট খাটো চা দোকান করতে পারেন।

আপনি সামলে নেবেন। যদি ভাবেন আপনি একা একটু বড় কারখানার খুলবেন? তা আপনি একা পারবেন না। এখানে যৌথশক্তি বা শেয়ার পার্টনার প্রয়োজন। বেশি লোকজনের প্রয়োজন। যা আপনর সামর্থ্যে কুলোবে না। তাই দিশাহীন পরিকল্পনা ও ব্যর্থ হয়ে যাবে।

4. উপযুক্ত প্রশিক্ষণ:-

 আপনি যে পেশাতেই কাজ করতে যান না কেন আপনাকে সুন্দর একটা প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সে সরকারি বেসরকারি কিংবা অনলাইন প্রশিক্ষণ যাই হোক না কেন।

কারণ প্রশিক্ষণ ছাড়া কোন কাজ স্বার্থক হয় না। তাই পরিকল্পনার আগে পেশাগত শিক্ষায় আপনাকে এক্সপার্ট হতে হবে,পূর্ব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে তবে আপনি একজন আসল ক্যারিয়ার গঠনের সুনিশ্চিত পথ অবলম্বন করতে পারবেন।

শেষকথা :

মোটামুটি এই ছিল ক্যারিয়ার গঠনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়। যেগুলো আপনাদের সামনে আলোচনা করলাম যা অনুধাবন করে আপনার ভবিষ্যতে নিজেদের ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে একটু খানি আশ্বাস বাণী হিসাবে কাজ করে তবে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।

আপনারা সবাই ভাল ও সুস্থ থাকবেন। ক্যারিয়ার সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন আমি অতি সত্বর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। আবার পরের লেখনীতে দেখা হবে। ধন্যবাদ।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ