প্রযুক্তির ছোঁয়া আধুনিক করেছে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে।

প্রযুক্তি আমাদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে দিয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া।যার জন্য সম্ভব হয়েছে আজকের এই উন্নত চিকিৎসা দেয়া-নেয়া।চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবদান নিয়েই আজকে আমার আলোচনা।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

ভূমিকাঃ

বর্তমানে আমরা নিমজ্জিত  আছি প্রযুক্তির মহাসাগরে। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকটা দিন আমাদের প্রযুক্তির সাথেই কাটে। আমরাতো প্রযুক্তি বিহীন একটা দিন কল্পনাও করতে পারি না এখন।

প্রযুক্তির উন্নয়ন আমাদের জীবনযাত্রাকে পাল্টে দিচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে তত উন্নত হচ্ছে প্রযুক্তি আর  আমাদের জীবন মানও  আরো বেশি আরামদায়ক হয়ে উঠছে।

প্রযুক্তি আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা জিনিসের সাথে মিশে আছে। প্রযুক্তির বিস্তার জমিন থেকে আকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে।

যেদিকেই চোখ যাবে সবদিকেই প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগে আছে।  এমন কোনো দিক নেই যেখানে প্রযুক্তি তার অবদান রাখেনি।  সারাদিনের কাজ  কর্ম, রান্নাবান্না, অফিস-আদালত, যোগাযোগ  থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা কাজের সাথে প্রযুক্তি জড়িত।অনেক কিছুর পাশাপাশি প্রযুক্তি চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে অবদান রেখেছে তা অনস্বীকার্য।

আজকে আমি আলোচনা করব চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি কিভাবে কতটা অবদান রেখেছে সে সম্পর্কে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তিঃ

বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের প্রযুক্তির ও সেরকম উন্নয়ন ঘটেছে। বিজ্ঞান যত সামনে এগিয়েছে প্রযুক্তি তত বেশি  উন্নত হয়েছে। একটা সময় ছিল যখন মানুষ অসুস্থ হলে বিনা চিকিৎসায় মারা যেত।

কারণ তারা চিকিৎসা করতে  জানতোনা। যতটুকু  যে যত পারতো আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করার চেষ্টা করত। কিন্তু গাছের লতাপাতা  আর শেকড় -বাকড়  কতইবা  রোগের নিরাময় করত।

এর পরে দিন যখন আরেকটু উন্নত হল তখন মানুষ চিকিৎসকের কাছে যেত কিন্তু চিকিৎসক কোন আধুনিক চিকিৎসা তাদেরকে দিতে পারত না।

কারণ কোন যন্ত্রপাতি নেই চিকিৎসকের  আধুনিক ডাক্তারি  বিষয়ে কোন জ্ঞান  ছিলনা। এমনকি এমনও হতো হাসপাতাল বা ডাক্তারখানা   অনেক বেশি  দূরে হওয়ার কারণে রোগীরা সেখানে যেতে পারত না। অনেক রোগী মারা যেত বিনা চিকিৎসায়। 

দিন পাল্টেছে। এখন আর মানুষকে বিনাচিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করে নিতে হয় না। কারণ প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে ঘটেছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের  বিপুল পরিবর্তন। ডিজিটাল হয়েছে সবকিছু।

সর্বপ্রথম প্রযুক্তির অবদান রেখেছে ঔষধ তৈরিতে। ওষুধ কোম্পানিতে বিভিন্ন কেমিক্যালের মিশ্রণ করে সঠিক পরিমাণে উপাদান দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন  ঔষধ তৈরি করা হয় প্রযুক্তির সাহায্যে।     একেক রোগের জন্য আবিষ্কৃত হয়েছে একেক রকম  নিরাময় পথ্য।

চিকিৎসার জন্য ঔষধ তৈরিতে প্রযুক্তির ভূমিকাঃ

ঔষধ তৈরিতে প্রযুক্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষ বিভিন্ন ধরনের মেশিন তৈরি করতে পেরেছে। বিভিন্ন রকমের যন্ত্রপাতি বিভিন্ন রকম কাজ করতে  ব্যবহৃত হয়। একটা নির্দিষ্ট ঔষধ বানানোর জন্য ঐ ঔষধে কি পরিমাণে কোন উপাদান মিশাতে হবে, কতক্ষণ সময়  নিয়ে  তৈরি  করতে হবে  সবকিছু ঠিক করে দেয় প্রযুক্তি।

এই যে আমরা জ্বর হলে প্যারাসিটামল  বা  নাপা খাচ্ছি, গ্যাস্ট্রিকের  সমস্যায় ওমিপ্রাজল খাই, সর্দি , এলার্জির জন্য হিস্টাসিন  খাই ইত্যাদি প্রত্যেকটা রোগীর  আলাদা আলাদা ঔষধ এগুলোতো প্রযুক্তি ব্যবহার করেই  তৈরি করা হয়েছে।

প্রযুক্তি যত উন্নত হয়েছে গবেষণা করা তত সহজ হয়েছে। গবেষণা করতে করতে  গবেষকরা প্রতিদিন নতুন নতুন ঔষধ আবিষ্কার করতে সক্ষম হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও কিন্তু ক্যান্সারের  কোনো  ঔষধ ছিল না।  কেউ ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তার সে রোগের জন্য নিশ্চিত মৃত্যু ছিল।

কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানীরা ক্যান্সারের ঔষধ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে, কেমোথেরাপি দিয়ে অনেকেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আমার ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিনের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছে ইনসুলিন।  ইনসুলিন রোগীর দেহে  পুশ করার মাধ্যমে  রোগীরা অনেকদিন পর্যন্ত সুস্থ  থাকে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ে  প্রযুক্তিঃ

চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রযুক্তি এনেছে আমূল পরিবর্তন। আগে যখন মানুষ প্রযুক্তির ব্যবহার জানত না আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা ছিল না। তখন ডাক্তাররা রোগীদের চিকিৎসা  করতো লক্ষণ এর ওপর ভিত্তি করে।

রোগীর বাহ্যিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ঔষধ  দিতেন। এতে অনেক সময় সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হতো না। কারণ শুধুমাত্র লক্ষণ দিয়ে নির্ভুলভাবে রোগ বোঝা সম্ভব না। এমন অনেক রোগ রয়েছে যেগুলো দেহের ভিতরে  হয়। বাহ্যিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তার ভিতরের অবস্থা বোঝা যায় না। তাই আগে অনেক রোগীরই  মৃত্যু হতো ভুল চিকিৎসার কারণে।

অনেক সময় কোন রোগের অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলেও  চিকিৎসকরা করতে পারতেন না কারণ তার কাছে আধুনিক যন্ত্রপাতি ছিল না কিংবা ছিল না আধুনিক শল্য চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান  ধারণা। যার কারণে অকালে ঝরে যেত অনেক প্রাণ।

কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে আবিষ্কৃত হয়েছে নতুন নতুন অনেক যন্ত্রপাতি মেশিন। যেগুলো ব্যবহার করে চিকিৎসকরা রোগী বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সব রকমের রোগ নির্ণয় করতে পারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।   আজকাল শল্যচিকিৎসা তো আছেই তার সাথে বিনা কাটাছেঁড়ায়  অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে।

রোগীরা ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা করেন।কারো দেহের  পাজর কিংবা যেকোনো  অস্থির  কোন রকম সমস্যা নির্ণয় করার জন্য এক্সরে করা হয়।

এছাড়া   ইসিজি, এন্ডোস্কোপি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই  ইত্যাদি বিভিন্ন রকম পরীক্ষা করে দেহের  ভিতরের রোগ নির্ণয় করা হয়। এবার আসা যাক উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় অস্ত্রোপচার সম্পর্কে।

এ দিকে তাকালে আপনি দেখবেন  বর্তমানে চিকিৎসকরা কত জটিল জটিল অপারেশন করছে যেগুলো  পূর্বে কেউ কল্পনাও করতে পারতাম না। টিউমার, অ্যাপেন্ডিক্স, সিজারিয়ান সেকশন ইত্যাদি অপারেশনের সাথে সাথে অনেক কঠিন ও জটিল রোগের অস্ত্রোপচার  করা সম্ভব হচ্ছে।

ব্রেন টিউমার অপারেশন, ক্রায়োসার্জারি, কেমোথেরাপি, কিডনি ডায়ালাইসিস, প্লাস্টিক সার্জারি, চোখ- কিডনি প্রতিস্থাপন, জমজ দেহ আলাদা করা ইত্যাদি হল আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কিছু   ট্রিটমেন্টের উদাহরণ।

ভিডিও কলের মাধ্যমে চিকিৎসাঃ

ইন্টারনেট আবিষ্কার হওয়ার ফলে আজকাল ডাক্তাররা ল্যাপটপ /মোবাইল এর মাধ্যমে ভিডিও কলে রোগী দেখে চিকিৎসাসেবা দিতে পারে।

এই সিস্টেমে দূরদূরান্ত থেকে রোগীদের কষ্ট করে  হসপিটালে আসার প্রয়োজন হয় না। রোগীরা ঘরে বসেই ভিডিও   কল করে ডাক্তারি পরামর্শ  গ্রহণ করতে পারেন। ডাক্তার রোগীকে ভিডিও কলে  পর্যবেক্ষণ করেন, রোগীর কোথায় সমস্যা, কোন ধরনের সমস্যা এগুলো সরাসরি ডাক্তার জিজ্ঞেস করে জেনে  নিয়ে সেই অনুযায়ী প্রেসক্রিপশন লিখতে পারেন। 

এভাবে বিশ্বের  এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে, দেশ-বিদেশে যেকোনো অবস্থায় বা পরিস্থিতিতে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া যায়।

প্রযুক্তি  যদি এমন হতো না হতো তাহলে আমরা আজ থেকে আধুনিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারতাম না। 

সর্বোপরি, প্রযুক্তি শুধু আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই নয়  বরং আমাদের নিত্যদিনকার প্রত্যেকটি কাজের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ