“জ্যাক মা”-এর সফলতার আত্ব কাহিনী- জীবনের মোড় ঘোরিয়ে দেবে

 

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যাক্তি “আলবিাবা.কম”-এর প্রতিষ্ঠাতা। জীবনের শুরু থেকেই নানা ধর্মী সংগ্রামের মধ্যে এগিয়েছেন। তার জীবনে প্রাইমারিতে দুইবার ফেল, মাধ্যমিকে তিনবার ফেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় তিনবার ফেল, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বার আবেদন করেও প্রত্যাখ্যাত, চাকুরী পরীক্ষায় ত্রিশবার ব্যর্থ হবার মত পরাজয়ের গল্প রয়েছে। কিন্তু সব জড় থেকে বেড়িয়ে নিজেকে বিশ্বের অন্যতম “বিজনেস ম্যাগনেট” হিসেবে প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আজকের এ টপিকে থাকছে এই সফল মানুষের সাফল্য গাথা সকল তথ্য....

অনলাইন ভিত্তিক সপিং কম্পানি আলীবাবার সফল প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। তার আসল নাম ‘মা ইয়ুন’ তিনি ১৯৬৪ সালের ১৫ই অক্টোবর চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চেজিয়াং অঞ্চলের হমচু শহরের একটি মধ্যভিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারের তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার বাবা- মা ছিলেন ট্র্যাডিশনাল মিউজিশিয়ান ও গল্পকথক।

বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ও গল্প শুনিয়ে তারা অর্থ উপার্জন করতেন। ‘মা’-এর দাদা ছিলেন চীনের জাতীয়তাবাদী দলের একজন স্থানীয় অফিসার। চেয়ারম্যান ‘মা’ও জাতীয়তাবাদী দলকে হারিয়ে দেওয়ার পরে জ্যাক মায়ের দাদাকে কমিউনিস্ট পার্টির শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়।

এছাড়াও চীনে যখন সবে সাংস্কৃতিক আন্দোলন শেষ হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির শত্রু হবার কারণে জ্যাক মায়ের পরিবারকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে মধ্যভিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করার কারণে ‘জ্যাক মা’ কখনোই আক্ষেপ করেন নি। তিনি বলেন, “আপনি দরিদ্র হয়ে জন্মানোটা দোষের না কিন্তু আপনি দরিদ্র হয়ে থাকাটাই দোষের।

আপনি যদি একটি দরিদ্র ঘরে জন্ম নিয়ে নেজর ৩০ বছর বয়সেও সেই দরিদ্রই থাকেন, তবে দরিদ্র হয়ে থাকাটা আপনার কপালের দোষ নয়, আাপনি এটি প্রত্যাশা করেন। কারণ আপনি আপনার যুবক বয়সকে কোন কাজে লাগাতে পারেন নি, আপনি সম্পূর্ণ ভাবে সময়টা নষ্ট করে দিয়েছেন।”

ছোট বেলা থেকেই ইংরেজী শেখার উপর জ্যাক মায়ের তীব্র যোক ছিল। তিনি তার বাড়ি থেকে প্রতিদিন ৭০ মিনিটের বাইক রাইট করে পংজু ইন্টারনেশন্যাল হোটেলে যেতেন। সেখানে তিনি পর্যটকদের ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করতেন। তবে বিনিময়ে তিনি কোন অর্থ নিতেন না। তিনি তাদের কাছ থেকে শুধু ইংরেজী শিখতেন।

তাঁর আসল নাম ‘মা ইয়ূন’ উচ্চারণ করতে কষ্ট হতো বলে তার এক পর্যটন বন্ধু তাঁর নাম দেন ‘জ্যাক”। স্কুলে তিনি এই নাম ধারণ করে আসছেন। স্কুলে জ্যাক মা প্রায়ই তাঁর সহপাঠিদের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হতেন। হালকা-পাতলা ও রুগাটে শিশুর মতো হওয়ায় কেউ তাকে উৎসাহিত করতো না। ‘জ্যাক মা’ বলেন, ‘আমার চেয়ে বড় প্রতিদ্ব›দ্বীকেও আমি কখনই ভয় পেতাম না।’ স্কুলে তিনি স্টুডেন্ট কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন। তিনি ছোট বেলায় ঝিঝি পোঁকা সংগ্রহ করতেন এবং তাদের মারামারি প্রত্যক্ষ করতেন।

জ্যাক মা বুঝতে পেড়েছিলেন অর্থাভাবের এমন পরিস্থিতিতে তাঁর জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে তার পড়াশোনায় ভাল করতে হবে। জীবন সংগ্রাম শুরু হয় কলেজে ভীর্ত পরীক্ষা থেকে। চীনে কলেজে ভর্তি হতে একটি প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হতো। তিনি সেখানে তিনবার ফেল করেন। অর্থাৎ এক বছরের ফলে চার বছর লেগে যায় প্রবেশিকা পাশ করতে। তাঁর এ ব্যার্থতার কারণ হিসেবে তিনি তার গণিতের দূর্বলতাকে দায়ী করেন। কারণ তিনি ইংরেজী ভালো পারলেও গণিত ভালো পারতেন না। তিনি একবার গণিতে ১ মার্ক ও পেয়েছিলেন। 

তিনি হাংরি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হন। তিনি সেখান থেকেও ১৯৮৮ সালে ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক শেষ করেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে তিনি অনেকগুলো চাকুরীর জন্যে আবেদন করেন। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। তাঁর দেয়া তথ্য মতে, এই প্রত্যাখ্যানের সংখ্যা প্রায় ৩০এর মত।

চীনের কেএফসি প্রথম এলে তিনি সেখানে চাকুরীর জন্যে আবেদন করেন। ইন্টারভিউ বোর্ডের ২৪ জনের ২৩ জনের চাকুরী হয়ে যায়। কেবল একমাত্র তিনি প্রত্যাখ্যাত হন। এমনকি বিশ্ববিদ্যাল পড়া শেষ করেও তিনি চাকুরী পাচ্ছিলেন না। সবশেষে, হাংজু ডেইনাজি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজীর শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। এসময় তিনি বেতন হিসেবে ১২ ডলার পেতেন।

হাংজু হাংজু টিচার্স ট্রেনিং কলেজে পড়া অবস্থায় তার সাথে দেখা হয় ‘জা ইয়ং’ এর সাথে। তারা ৮০’র দশকে এসে বিবাহের কাজ সম্পন্ন করেন। জ্যাক মা ও জা ইয়ং দম্পতির ঘরে একজন ছেলে সন্তান ও একজন মেয়ে সন্তান রয়েছে। জ্যাক মা-এর ছেলে ইউসি পার্কলি ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক করেছে। জ্যাক মা নিয়মিত ছেলের ইতিহাস বিষয়ের ক্লাস নিরীক্ষা করেন। তবে পারিবারিক বিষয়গুলো তিনি কখনোই সবার সামনে আনেন নি।

পরবর্তীতে তিনি ২০০৬ সালে জিয়ংকঙ্ক গ্রাজুয়েট স্কুল অব বিজনেস থেকে তিনি স্নাতক করেন। তাঁর এক বন্ধুর কম্পিউটাররের মাধ্যমে ইন্টারনেরে সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে। তিনি ইন্টারনেটে বিড়াল লিখে চার্স করেন। কিন্তু তিনি চীনভিত্তিক কোনো তথ্য খুঁজে পান নাই। আর এ বিষয়টি তাঁকে খুবই মর্মাহত করে।

তিনি দেশে ফিরে চীন ভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। এর মাঝে বিভিন্ন চাইনিজ তাঁকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁকে মেইল করতে থাকেন। ফলে ইন্টারনেট ও চীনের যোগসূত্র তৈরি করতে তিনি উদ্যমী হয়ে উঠেন। তিনি এ সময় তার ২৪ জন বন্ধুকে এ বিষয় শুনান। কিন্তু মাত্র একজন ব্যতীত বাকী সবাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেন।

তারপর তাঁর স্ত্রী ও একজন বন্ধুকে নিয়ে প্রায় বিশ হাজার ডলারের একটি ফান্ডিং তৈরী করেন। এই ফান্ডিং থেকে ১৯৯৫ সালের এপ্রিল মাসে “Chaina Yellow Page” নামে একটি ওয়েবসাইট খুলেন। মূলত চীনের বিভিন্ন তথ্য নিয়েই এই সাইটটি তৈরি করেন জ্যাক মা। পরবর্তী তিন বছরে এই সাইটটি ৫০ লাখ চাইনিজ ইয়েন অথ্যাৎ ৫ লাখ ডলার উপার্জন করে। কিন্তু তবুও এই খানে জ্যাক মা ব্যর্থ ছিলেন।

কারণ একটা সময় পরে গিয়ে ‘চায়না টেলিকম’ একরকম জোর করে “চীন ইয়োনো পেজ” এর অংশীদারিত্ব নেয়। আর্থিক ক্ষতি ঠেকাতে ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত জ্যাক  Ministry of Foreign Trade and Economic Cooperation - এর টেকনোলজি কোম্পানি– China International Electronic Commerce Center এর প্রধান হিসেবে কাজ করেন।

কিন্তু তার ফলে বস্তুত তার কোনো ফল হয় নি। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে তিনি এ ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেন। এ সময় তিনি ১৮ জন সহ প্রতিষ্ঠাতা নিয়ে আলীবাবা চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। লৌকিক কাহিনী আলীবাবা ৪০জন থেকে তিনি আলীবাবা নামটি নেন। আলিবাবা চালু করার উদ্দেশ্রে তিনি হংঝু শহরে ফিরে যান।

তার কাছে থাকা পাঁচ লাখ চাইনিজ ইয়েন দিয়ে “আলিবাবা”-র যাত্রা শুরু করেন। “আলিবাবা”-র পুরো পরিকল্পনা করতে তার ‘রপ্তানি ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা’ তাকে সবচেয়ে সাহায্য করে। শুরুর দিকে আলিবাবা ছিলো মূলত প্রোডাক্ট লিস্টিংয়ের একটি ওয়েবসাইট যা ক্রেতাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করত।

১৯৯৯ সালের অক্টোবরে গোল্ডম্যঅন ম্যাক্স ৫ মিলিয়ন ডলার এবং ২০০০ সালের জানুয়ারিতে জাপানিজ টেলিকম কোম্পানি সফটব্যাংক বিশ মিলিয়ন ডলার আলিবাবাতে বিনিয়োগ করে। ফলে সব মিলিয়ে আলিবাবাতে পঁচিশ মিলিয়ন ডলারের মূলধন যুক্ত হয়। আলিবাবার এই সাফল্যসরূপ জ্যাক মা প্রত্যেক কর্মীকে ‘সিলি স্ট্রিং’ এর একটি করে ক্যান উপহার দেন। তিনি চীনে আলিবাবা-কে একটি স্থানীয় ই-কমার্স সাইট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করানোর পরিকল্পনা করেন। আর এই ‘আলিবাবা’-র বর্তমান বাজার মূল্য ৪৬২.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে আলিবাবা  গ্রুপ প্রায় ৩০,০০০ কর্মী কাজ করে।

তিনি হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো- তিনি এই হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য ১০ বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলো।

‘জ্যাক মা’ -এর অস্বাধারন কিছু উক্তি---

১.  স্বপ্নটা বেঁচে থাক।

২. প্রত্যাখ্যাত হওয়াও জীবনের অংশ

৩. দলগত ভাবে কাজ করা শিখুন

৪. মানুষের বিশ্বাস অর্জন করুন

৫. প্রতিযোগীকে অনুসরণ করবেন না

৬. সেরা নয়, সঠিক মানুষকে খুঁজুন

৭.  নিজেকে প্রশ্ন করা শিখুন

৮. অন্যের ভূল থেকে শিখুন

৯.  অভিযোগ করার আগে সমাধান জানুন

১০. সব সময় কিছু না কিছু শিখুন

 

 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments
MD. Akramul Hoque - May 27, 2021, 7:55 PM - Add Reply

অনেক সুন্দর একটা কাহিনি। সত্যিই জীবনের মোর ঘুরানোর মতো।

You must be logged in to post a comment.
Gaming NIR - May 27, 2021, 11:52 PM - Add Reply

এখানে কেউ শতভাগ নিশ্চিত পেমেন্ট পেয়েছেন কি

You must be logged in to post a comment.
🍁(( Jorna Rahman )) 🍁 #💠কে তুই বল #💠 - Jun 15, 2021, 8:35 PM - Add Reply

nice

You must be logged in to post a comment.

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ