সন্তানের হাতে এন্ড্রয়েড ফোন তুলে দিয়ে দুশ্চিন্তা ? চ্যাটিং নিয়ে আর দুশ্চিন্তা নয় বরং সচেতন হোন।

আপনার সন্তানের হাতে এন্ড্রয়েড ফোন তুলে দিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে?  আর দুশ্চিন্তা নয়  বরং সচেতন হোন।  আজকে আমরা চ্যাটিং  এর ভাল খারাপ দিক গুলো নিয়ে লিখব।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

চ্যাটিং : 

চ্যাটিং বলতে আমরা সাধারণত ইন্টারনেট ব্যবহৃত  বিভিন্ন সোশ্যাল  মিডিয়া যেমন - ফেসবুক মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম,  ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ,ভাইবার, ইত্যাদির মত বিভিন্ন আ্যাপের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো  প্রান্ত থেকে একে অপরের  সাথে লিখে, ভয়েস পাঠিয়ে  কথা বলা বা যোগাযোগ  করাকে বুঝে থাকি।   চ্যাটিং  শব্দটি বর্তমানে সকল বয়সের মানুষের কাছেই বেশ সুপরিচিত একটি  শব্দ৷ চ্যাটিং বিভিন্ন  রকমের হয়ে থাকে।  যেমন - টেক্সট চ্যাটিং, ভয়েস চ্যাটিং, ভিডিও  চ্যাটিং  ইত্যাদি।

কয়েকটি জনপ্রিয়  চ্যাটিং আ্যাপ -

টেলিগ্রাম : 

স্মার্টফোনের  জন্য চ্যাটিং আ্যাপের তালিকায় প্রথম  স্থানে  রয়েছে টেলিগ্রাম। এর বিশেষ সুবিধা এর চ্যাটসমূহ  ক্লাউডে সংরক্ষণ  করা যায়। এতে শেয়ারকৃত ফাইলের  কোনো সাইজ লিমিট থাকে না। যেকোনো সাইজের ফাইল টেলিগ্রামের  মাধ্যমে  শেয়ার করা যায়।

এর সবচেয়ে অসাধারণ  ফিচার  হচ্ছে উন্নত গ্রুপ চ্যাট  সিস্টেম। একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে সর্বোচ্চ ২০০,০০০ জনকে একসাথে এড করা সম্ভব। বর্তমানে দেশ - বিদেশে টেলিগ্রাম  গ্রুপ চ্যাটের মাধ্যমে  অনেক অনলাইন ব্যবসা করা হচ্ছে। 

 

হোয়াটসঅ্যাপ : 

হোয়াটসঅ্যাপ মূলত ফোন নাম্বার ভিত্তিক হওয়ায় এটি ব্যবহারকারীর কন্টাক্ট  তালিকায় থাকা ফোন নাম্বারের মধ্যকার সকল হোয়াটসঅ্যাপ  ব্যবহারকারীকে আপনা - আপনি এড করে নেয়। এতে মেসেজিং,  ভয়েস চ্যাট, ভিডিও  চ্যাট সহ যেকোন ধরনের লিংক শেয়ার  এর সুবিধা রয়েছে। 

ফেসবুক  মেসেঞ্জার : 

ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার  সম্পর্কে  জানেন না এমন মানুষের  সংখ্যা অনেক কম। রুমস, স্টোরি, লোকেশান, ফটো, ভিডিও  শেয়ারিং  এর সুবিধা মেসেঞ্জার এর জনপ্রিয়তাকে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।

ফেসবুক  মেসেঞ্জার  এর  গ্রুপ চ্যাটে অডিও এবং ভিডিও চ্যাটে সর্বোচ্চ  ৫০ জন পর্যন্ত যুক্ত হতে পারেন। এর  ভ্যানিশ মোড নিজে থেকেই  মেসেজ মুছে ফেলতে পারে। 

ইমো :

ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপ  এর মতই নাম্বার ভিত্তিক  একটি জনপ্রিয় আ্যাপ। এতে টেক্সট, ভয়েস  ও ভিডিও  চ্যাটের সুবিধা রয়েছে৷ 

স্ন্যাপচ্যাট  :

বলা যায়, স্ন্যাপচ্যাট সেলিব্রেটিদের দ্বারা জনপ্রিয়তা  অর্জনকারী  একটি আ্যাপ। অন্য চ্যাটিং আ্যাপ গুলোর থেকে স্ন্যাপচ্যাট  অনেকটাই আলাদা। এর ফিচার ছোট হলে ও এতে সকল ধরনের চ্যাটিং  ব্যবস্থা রয়েছে।  তবে স্ন্যাপচ্যাট  এর প্রেরণকৃত মেসেজ একবার সিন করার  পরেই ভ্যানিশ হয়ে যায়। 

যার ফলে দুইজন ব্যাক্তির মধ্যকার কথোপকথন তৃতীয় ব্যাক্তির দ্বারা দেখা সম্ভব হয় না৷  এছাড়া কেউ যদি চ্যাট এর স্ক্রীনশট ও নেয় সেটি অন্যপক্ষের বার্তা প্রেরনকারীকে জানিয়ে দেয় স্ন্যাপচ্যাট ।  এতে ছবি তোলা যায়। ও ভিডিও রেকর্ডের  বিভিন্ন লাইভ ফিল্টার যা ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।

ডিসকর্ড : 

২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া গেমারদের জন্য নির্মিত একটি আ্যাপ।  এই আ্যাপ গেমারদের জন্য গেমিং এর সময় টিম ম্যানেজমেন্ট এর সুবিধা প্রদান করে৷  এতে রয়েছে চ্যানেল নামক গ্রুপ চ্যাটের সুবিধা, যার মধ্যে আবার আলাদা আলাদা আড্ডার ধরনের জন্য আলাদা সাবগ্রুপ তৈরি করা যায় এবং এর আলাদা সেটিংস রয়েছে যা গ্রুপ চ্যাটিংকে আরো ফ্লেক্সিবল করেছে। 

লাইন :

লাইন আ্যাপটি অনেকটাই ফেসবুকের মত।  এতে  চ্যাটিং এর সকল সুবিধা রয়েছে৷ । এর বিশেষ সুবিধা হচ্ছে -  লাইন আ্যাপ ব্যবহারকারীরা একে অপরের  সাথে চ্যাট করা অবস্থায়, অডিও  কলে থাকা অবস্থায় ইউটিউব  ভিডিও দেখার সুবিধা আছে। 

এছাড়া ও স্কাইপ, উইচ্যাট, ইয়াহু, ভাইবার, টুইটার  ইত্যাদিতেও সকল ধরনের চ্যাটিং ব্যবস্থা রয়েছে।

চ্যাটিং এর মাধ্যমে যোগাযোগ এর পাশাপাশি  অনেকে অনলাইন ব্যবসা করছে, কেউ বা ইংরেজি  শিখছে, আবার অনেকে গ্রুপ স্টাডি  করছে।

ঢাকা নটর ডেম কলেজে এ অধ্যায়নরত একাদশ  শ্রেণির ছাত্র সুমন বিশ্বাস বলেন,  "আমি আগে  ইংরেজিতে কথা বলতে পারতাম তবে সেটা থেমে থেমে কিন্তু এখন গ্রুপ চ্যাটিং এর ফলে আমি ফ্লুয়েন্টলি  ইংরেজিতে  যে কারোর সাথেই কথা বলতে পারি।"

মৌলভীবাজার সরকারী  কলেজ এ একাউন্টটিং বিভাগে  অধ্যায়নরত ছাত্রী আঁখি পুরকায়স্থ  বলেন,  "আমি হোস্টেল এ থাকাকালীন সময়ে আমার মন খারাপ করলে,  বাবা - মায়ের কথা মনে পড়লে আমি তাদের সাথে ভিডিও চ্যাট করি। এই চ্যাটিং বিষয়টা  আমার মন ভালো করার জন্য বেশ পছন্দের একটি মাধ্যম। "

জামালগঞ্জ  কলেজে ডিগ্রি ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্রী শারমিন বেগম বলেন,  "আমার ছোটভাই এর হাতে এন্ড্রয়েড  ফোন তুলে দিয়ে আমার আম্মু খুব দুশ্চিন্তা করেন । পরিবারের সবাই মিলে যখন গল্প করি, তখন সে মোবাইল হাতে নিয়ে চ্যাটিং করে। আমরা যখন খাবার টেবিলে খেতে যাই তখন  ও সে মোবাইল  নিয়ে অন্যমনস্ক  হয়ে থাকে৷  রেজাল্ট ও তার খুব ভালো আসে নি৷"

আমরা বিভিন্নভাবে এরকম খবর ও শুনি যে, অনেক কিশোর - কিশোরী  আছেন যারা চ্যাটিং এ মগ্ন হয়ে অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের  সম্পর্ক স্থাপন করেন৷ যখন কোনো কারনে সেই সম্পর্কে  ফাটল ধরে তখন তাদের চ্যাট এর স্ক্রীনশট, ছবি   ভিডিও  চ্যাটের গভীর মুহুর্ত  গুলো ভাইরাল হয়ে পরে। 

সবকিছুরই একটা ভালো খারাপ দিক থাকে৷  আমাদের উচিত ভাল দিকটা গ্রহন করা ও খারাপ দিকটা বর্জন করা৷  

করনীয় :  

★ আপনার সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ  সম্পর্ক  স্থাপন করুন।  সে মোবাইল হাতে নিয়ে কি করছে সেটা জানুন।  

★অপরিচিত  কারো সঙ্গে চ্যাট করছে কি না খেয়াল রাখুন৷ 

★ আপনার সন্তান  বা ছোট ভাই -বোন কে চ্যাটিং এর ভাল ও খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে  জানান।  যাতে করে ভাল দিকগুলোকে গ্রহন করতে পারে।    

তাহলে আর চ্যাটিং নিয়ে  দুশ্চিন্তা নয় বরং সচেতন হোন। 

 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ