সফল ব্যবসায়ী হওয়ার কার্যকরী ১১টি স্ট্রাটেজি!

যে কেউ! যে কেউই ব্যবসা শুরু করতে পারে। কিছু ফরম পূরণ, প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র কিংবা লাইসেন্স, বৈধ প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস এবং তা নিয়ে ছোট-খাটো একটা বিজ্ঞাপন! নিঃসন্দেহে আপনি একজন ব্যবসায়ী।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

কিন্তু, একটি সফল ব্যবসা পরিচালনা সম্পূর্ণরূপে একটা ভিন্নধর্মী গল্প। একটি সফল ব্যবসা অনেকাংশে বোঝায়, নিজের পদাঙ্কে উজ্জ্বল অগ্নি শিখা। কারণ এটি সম্পূর্ণ নিজ চেষ্টায় গড়ে তুলতে হয়।

তবে একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অপ্রস্তুত মুহূর্তের সম্মুখীণ হতে হবে, অগণিত রাত জাগতে হবে ইত্যাদি।

প্রত্যেক উদ্যোক্তাই একটি সফল এবং লাভবান ব্যবসা চায়! কিন্তু সবসময় সবার দ্বারা এটি পাওয়া হয়ে উঠেনা।

একজন উদ্যোক্ত বা ব্যবসায়ী মানেই নিজেই নিজের বস, অন্যের বস। আপনার উপর কোনো আদেশ কিংবা নিষেধাজ্ঞা আসবেনা বরং আপনিই আদেশ করবেন, আপনিই নিষেধাজ্ঞা দিবেন, আপনার ইচ্ছেতেই সবকিছু হবে। এই যে আপনি আপনার ব্যবসার মাধ্যমে এত কিছু করবেন তার জন্য আপনাকে একটি সফল ব্যবসা দাড় করাতে হবে।

ক্যারিয়ার গাইডলাইন্স, ক্যারিয়ার টিপস, বা এমন কিছু কখনোই আপনাকে একজন সফল ব্যবসায়ী বানাতে পারবেনা। সফল ব্যবসায়ী হওয়ার জন্য আপনাকে ইফেক্টিভ বা কার্যকরী কিছু স্ট্রাটেজি অনুসরণ করতে হবে। এই আর্টিকেলে আমি ব্যবসায়ে সফল হওয়ার কিছু কার্যকরী কিছু স্ট্রাটেজি দেওয়ার চেষ্টা করবো।

#১ কাস্টমারদের অভিজ্ঞতার দিকে লক্ষ্য রাখুন

আপনি আপনার কাস্টমারদের সাথে কেমন অভিব্যক্তি দেখান, এটাই হচ্ছে আপনার প্রতি কাস্টমারদের অভিজ্ঞতা। কাস্টমাররা প্রথম থেকে শেষ অবধি আপনার থেকে একটি স্বাচ্ছন্দ্য অভিব্যাক্তি চায় এবং আশা করে। 

তবে কাস্টমারদের ওই অভিজ্ঞতা আবার দুই ধরনের হতে পারে। নেগেটিভ বা নেতিবাচক অভিজ্ঞতা এবং পজিটিভ বা ইতিবাচক অভিজ্ঞতা।

আপনি যদি আপনার ব্যবসা বেশি দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে না চান তাহলে কাস্টমারদের থেকে ওই নেগেটিভ বা নেতিবাচক অভিজ্ঞতাটি অর্জন করার চেষ্টা করুন। সহজ ভাষায়, নেগেটিভ বা নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হচ্ছে কাস্টমারদের সাথে তাদের আশানুরূপ ব্যবহার না করা।

আর যদি আপনি একটি লাভবান ব্যবসা এবং ব্যবসায় উন্নতি করতে চান তাহলে কাস্টমারদের থেকে ঐ পজিটিভ বা ইতিবাচক অভিজ্ঞতাটি অর্জন করুন।  

#২ শুনতে আগ্রহী এবং মনোযোগী হোন।

আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে লোকজন যখন আপনাকে কিংবা আপনার ব্রেন্ড নিয়ে কথা বলে তখন কি আপনি গুরুত্বসহকারে তা শোনার চেষ্টা করেন?

আপনি যখন আপনার ব্যবসায় অপ্রয়োজনীয় কোনো প্রোডাক্ট ঢোকাবেন তখন হয়তোবা কেউ কেউ আপনাকে ফেডবেক দিতে আসবে। তখন কি আপনি রেগে যান? কিংবা মনোযোগ দিয়ে শুনেন না?

এটা একদমই করতে যাবেন না।

লোকজনের ফেডবেককে গুরুত্ব দিতে হবে, মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে আর তারপর ফাঁক থাকা জায়গাগুলো পূর্ণ করে নিতে হবে।

#৩ একজন ভালো লিডার হয়ে উঠোন।

সবকিছুর আগে, ব্যবসায় দীর্ঘ সময়ের ভিশনের জন্য একটি উন্নত লিডারশীপ কুয়ালিটি অর্জন করার চেষ্টা করুন।

এমনকি কর্মচারী ছাড়া একটি নব ব্যবসা দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে কুয়ালিটিফুল লিডারশীপ থাকা আবশ্যক।

লিডারশীপের কী কী দক্ষতা লাগে সেগুলো খুঁজে বের করুন, সকল দক্ষতাগুলো নিয়ে রিসার্চ করুন, সেইগুলো আপনার মধ্যে চর্চা করুন।

কোনোটা না পারলে সেইটা নিয়ে হতাশ না হয়ে বরং স্কিপ করে নতুন আরেকটা শুরু করুন। কারন স্কিলের ক্ষেত্রে অপশানের শেষ পাওয়া দুর্বোধ্য!

#৪ বিশ্বাস রোপণ করুন।

ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ট্রিকস হচ্ছে বিশ্বাস রোপণ। আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে সেই বিশ্বাস রোপণের স্থানটা হচ্ছে কাস্টমার। আপনার ব্যবসার প্রোডাক্ট, সার্ভিস ১০০% আসল রাখুন, বিশ্বস্ত কমিউনিটি গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।

#৫ আপনার বার্তা ছড়িয়ে দিন।

সঠিক বার্তা, সঠিক সময় আর সঠিক মানুষ।

বর্তমান এই ডিজিটাল জেনারেশনে আপনার ব্যবসার বার্তাগুলোও ডিজিটাল করার চেষ্টা করুন। ডিজিটাল মাধ্যম দিয়ে আপনার কাস্টমারদের সাথে ডিজিটাল সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।

কিছু সাধারণ ডিজিটাল যোগাযোগ মেথড হচ্ছে-

  • ই-মেইল মার্কেটিং” ,
  • সোশ্যাল মিডিয়া”,
  • সার্চ মার্কেটিং”,
  • বিজনেস ওয়েবসাইট”,
  • পিপিসি এড”,
  • কন্টেন্ট মার্কেটিং”

ইত্যাদি! এছাড়াও আরও অনেক রাস্তা রয়েছে। আপনি একটু রিসার্চ করলেই পেয়ে যেতে পারেন।

#৬ নোট রাখুন।

আপনি আপনার ব্যবসার জন্য কোন কোন কাজগুলো করছেন, কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন, কোন ব্র্যান্ডের বা কোম্পানির সাথে ডীল করছেন ইত্যাদি এ সবকিছুর বিস্তারিত একটা নোটে নোট করে রাখুন।

একসাথে এতগুলো কাজের তালিকা মাথায় আসলে কিংবা নোটে দেখলে অবশ্যই একটু বিপাকে পড়ে যেতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে কাজগুলোকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিন।

#৭ হেড়ে যাবেন না।

ব্যবসা, শব্দ ৩টি হলেও এর বিশালতা অনেক। যারা ধৈর্য্য ধরে, পরিশ্রম করে, সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে কেবল তারাই সফল হতে পারে।

আপনি পথে অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হবেন, মাঝপথে ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করবে। কিন্তু ছেড়ে দিলেন তো হেড়ে গেলেন। আপনি যদি মাঝপথে থেমে যান, তাহলে কল্পনাও করতে পারবেননা আরেকটু সামনে গেলেই আপনি কি পেতেন। তখন আপনি আফসোস করবেন। কিন্তু আপনি যদি হেড়ে না গিয়ে বরং “আমি কেন পারবোনা এইটা?” এই প্রশ্নটা নিজেকে করে পরিশ্রম করে এগিয়ে যেতে থাকুন তাহলেই সফলতার আসল স্বাধটা উপভোগ আর অনুভব করতে পারবেন। তখন আপনি নিজেই নিজেকে ধন্যবাদ দিবেন মাঝপথে হেড়ে না গিয়ে সামনে এগিয়ে আসার জন্য।

তাই সফল ব্যবসার প্রথম স্ট্রাটেজিটাই হচ্ছে হেড়ে না গিয়ে বরং জেদ ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়া। আপনার এই জেদ যে ফিউচারে আপনাকে কী দেবে, তা আপনার কল্পনারও বাহিরে।

#৮ নির্দিষ্ট আর সঠিক পরিকল্পনা।

সফল ব্যবসা করার জন্য আপনার পরিকল্পনা বা প্লান লাগবেই। সেটা হোক কয়েক পাতা কিংবা কয়েক লাইনের। আপনি যদি আপনার ব্যবসার জন্য পরিকল্পনা বা প্লান না বানিয়ে থাকেন তাহলে সেটা অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। কারণ একটা সঠিক পরিকল্পনা কীভাবে আপনার ব্যবসা আপডেট করবে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।

সফল আর নামি-দামি সকল ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার জন্য একটি নির্দিষ্ট এবং সঠিক পরিকল্পনা অনুসরণ করেনা।

ইনকাম রেট, ক্যাশ প্রোজেক্সান, ব্যালেন্স শীট, এমনকি কাস্টকামরের মতামত এ সব নিয়েই আপনার একটা প্লান বানাতে হবে। কারণ এ সবই ব্যবসায়ের একেকটা আবশ্যিক বিষয়।

#৯ কাস্টমারের মতামত

কাস্টমার হচ্ছে আপনার ব্যবসার লক্ষ্মী। কাস্টমার এর চাওয়া, চাহিদার উপড়েই আপনার ব্যবসার লাভ-লোকসান নির্ভর করবে।

তাই কাস্টমারদের সাথে ভদ্রতা আর ভালো ব্যবহার বজায় রাখার চেষ্টা করবেন। অনেক সফল ব্যবসায়ীরাই আছে, যাদের ব্যবসা সফল্ভাবে চলার অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ কারন হিসেবে তাদের ভালো ব্যবহার দায়ী।

তাই কাস্টমারদে চাহিদার ধরণ, তারা কেমন পণ্য পছন্দ করে, কোন ব্র্যান্ডের পণ্য পছন্দ করে ইত্যাদি জানার চেষ্টা করুন। তারপর সেই অনুযায়ী পণ্য রাখার চেষ্টা করবেন। কাস্টমারদের সকল মতামত গুরুত্ব সহকারে নোট করে রাখবেন। যাতে, পরবর্তীতে কোনো কাস্টমার আপনার থেকে পণ্য নিতে এসে ফেরত না যায়।

#১০ নিজেকে চ্যালেঞ্জ দিন।

আপনি যদি একজন সফল ব্যবসায়ী হতে চান তাহলে নিজেকে নিজেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিন। কেউ আপনার হয়ে আপনার ব্যবসা দাঁড় করাতে আসবেনা, তাই যা করার নিজেকেই করতে হবে।

চ্যালেঞ্জ সবসময় আপনাকে এবং আপনার ব্যবসাকে সক্রিয় রাখবে। আপনি যদি একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ নিতে থাকেন, তাহলে ব্যবসার যেকোনো বাধা – বিপত্তি কাটিয়ে উঠতে আপনার কঠিন লাগার কথা না।

নতুন এবং কঠিন টাস্ক দ্বারা যখন আপনি নিজেকে একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ দিতে থাকবেন একটা সময়ে আরও কঠিন টাস্ক গুলোও আপনার জন্য সহজ হয়ে উঠবে। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনার উচিত, নিজেকে একটার পর একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ দেওয়া। তবে অবশ্যই সাথে ডেডলাইন দিয়ে।

#১১ সফল ব্যবসায়ীরা তাদের কাজকে ভালোবাসে।

আপনি যা করছেন বা করতে চাচ্ছেন যদি ভালোবাসা না থাকে তাহলে সেটা করবেন না। অন্যথায়, বেশি দূর পর্যন্ত যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার জন্য আপনাকে অনেকটুকু পথ ভ্রমণ করতে হবে এবং সেই সাথে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি আপনার করা কাজগুলোকে, আপনার এত দূর যাওয়া ভ্রমণকে ভালো বাসতে না পারেন তাহলে দিন শেষে হতাশা নিয়েই ঘরে ঢুকতে হবে।

নিজের কাজকে ভালো না বাসলে দীর্ঘ পথে ভ্রমণ করার জন্য আপনি নিজেকে মোটিভেট রাখতে পারবেন না।

আপনি কি লক্ষ্য করেছেন সফল ব্যবসায়ীরা অনেক পরিশ্রম করার পরেও , অনেক কিছু ত্যাগ - বিসর্জন দেওয়ার পরেও তাদের চোখে – মুখে সতেজতাত একটা রেশ থাকে?

এর কারন হচ্ছে, তারা তাদের কাজটি ভালোবেসে করে। আর কাজের প্রতি ভালোবাসা একটা মানুষকে বিনিময়ে ভালোবাসা আর সফলতা ছাড়া কখনোই নেতিবাচক কিছু দিবে না।

তাই, একজন সফল ব্যবসায়ী হতে চাইলে আপনার করা কাজটিকে ভালোবাসুন, দেখবেন অনেক কঠিন কাজগুলোও আপনার কাছে সহজ মনে হবে।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ