ফেসবুকের উপকারিতা এবং অপকারিতা

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় সাইট হচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুকের নির্মাতা হলেন-মার্ক জুকারবার্গ। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষ চলাকালীন সময়ে ফেসবুক তৈরি করেন ফেসবুকের পূর্বসূরি সাইট হচ্ছে ফেসম্যাস।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

ফেসবুক ২০০৪ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যকার উত্তম জানাশোনাকে উপলক্ষ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক প্রদত্ত বইয়ের নাম থেকে এই ওয়েবসাইটের নামকরণ করা হয়।

ফেসবুকের সদর দপ্তর হলো - ক্যালিফোর্ণিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুক তৈরি করেছিলেন বিনোদনের জন্য কিন্তু বর্তমানে এই সাইটটি অনলাইন আয় এর উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই সাইটে মানুষ তার নিজের কর্মসংস্থানের বিজ্ঞাপন দিয়ে আয় করছে।

ফেসবুকের উপকারিতা:

  • ফেসবুক ব্যবহার করে আয় করা:

মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে আয় করছে তার ফ্রি টাইম অনুযায়ী অনেকে নিজের কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রচার করছে আবার কেউ ফেসবুক থেকে নিজের পছন্দের কাজ খুঁজে নিচ্ছে এবং সেখান থেকে ইনকাম করছে।

  • বিনোদন এবং খবর:

ফেসবুক ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের খবর মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছে এবং ফেসবুক ব্যবহার করে কেউ কেউ  মনোরঞ্জন ও করছে ।

  • ছবি এবং ভিডিও সংরক্ষন:

আজ থেকে কয়েক যুগ আগে মানুষ ছবি অংকন এর জন্য চারুকলা শিল্প ব্যবহার করত। কিন্তু আধুনিক যুগে মানুষ ডিজিটাল ক্যামেরা অথবা স্মার্টফোনের মাধ্যমে ছবি তুলতে পারে এবং ফেসবুকের আরেকটি সুবিধা হল,

ফেসবুকে ছবি বা ভিডিও পোস্ট করা যায় এবং সেটা সংরক্ষণ করে রাখা যায় সারা জীবনের জন্য এখানে আপনি আপনার আনন্দময় মুহূর্ত এবং দুঃখের মুহূর্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।

  • বিজ্ঞাপন প্রচারের বড় প্ল্যাটফর্ম:

ফেসবুকে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের প্রোডাক্টের প্রচার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে থাকে এর সুবিধা হলো আপনি ঘরে বসে আপনার প্রোডাক্টের প্রচার করতে পারবেন কোনো ধরনের সময় নষ্ট হবে না এবং এখানে আপনার প্রোডাক্টের প্রচার করলে সারা পৃথিবীর মানুষ দেখতে পাবেন এবং এতে খরচ কম হয়।

  • সমস্যার সমাধান খোঁজা:

ফেসবুক জনপ্রিয় সাইট হওয়ার কারণে এখানে জ্ঞানী মানুষ সহ বিভিন্ন ধরনের মানুষের আনাগোনা থাকে সেজন্য আমরা আমাদের যে কোন সমস্যা এখানে প্রকাশ করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই সমস্যার সমাধান পেয়ে যাই/যাব।

  • বন্ধু তৈরি করা:

সাধারণত মানুষ নতুন বন্ধু তৈরিতে আগ্রহী নয় কারণ আমাদের মনে সন্দেহ থাকে সে কি রকম হবে তার চরিত্র কি রকম হবে কিন্তু আমরা ফেসবুকে বন্ধু তৈরীর পূর্বে তার সকল বিবরণ জানতে পারব/পারি । আমরা নিজ ঘরে বসে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব তৈরী করতে পারি।

  • বন্ধুদের সাথে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়া:

ফেসবুকের মাধ্যমে ঘরে বসে আমরা আমাদের বন্ধুদের সাথে আমাদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে পারি এবং যেকোন সমস্যার জন্য পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

  • বন্ধুদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলা:

আজকে থেকে কিছু বছর পূর্বে কারো সাথে ভিডিও কলে কথা বলার জন্য টেলিকম কোম্পানি কে প্রচুর পরিমাণে খরচ দিতে হতো আর এখন বর্তমানে ফেসবুকে ভিডিও কল করে কথা বলা যায় একদম ফ্রিতে কোন খরচ ছাড়াই। তবে হ্যাঁ আমরা যার সাথে কথা বলব তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট/প্রোফাইল থাকতে হবে এবং আমার সাথে ফেসবুকে তার ফ্রেন্ড থাকতে হবে।

  • গ্রুপ এবং পেইজে সংযুক্ত থাকা:

ফেসবুকে বিভিন্ন বিষয়ে গ্রুপ এবং পেজ রয়েছে আমরা আমাদের পছন্দমত যেকোনো একটি পেজ বা গ্রুপ এ জয়েন হয়ে আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারি যেমন ধরুন-আমার পছন্দ টাইপিং জব এর জন্য আমি একটি অনলাইন জব/হেল্পলাইন গ্রুপ বা পেইজে যুক্ত হয়ে লাইক করে রাখলাম এখন থেকে ওই গ্রুপে যদি আমার পছন্দের বিষয়ে কোন পোস্ট করা হয়,

বা কোনো আপডেট আসে তাহলে সরাসরি আমার কাছে ম্যাসেজ আসবে তারপর আমি আমার ফ্রি টাইম অনুযায়ী সেগুলো চেক করে আমার পছন্দ মত কাজে জয়েন হতে পারব এবং সেখান থেকে ইনকাম করতে পারব।

  • ফেসবুক নেটওয়ার্কিং:

ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। সে হতে পারে আমাদের পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ইত্যাদি এবং আমরা কথা বলার জন্য মেসেজ, ভিডিও কল, অডিও কল, লাইভ ভিডিও তেও কথা বলতে পারি একদম ফ্রি তে

ফেসবুকের অপকারিতা:

  • অপরিমিত ফেসবুক ব্যবহার:

পৃথিবীতে সকল জিনিসই পরিমিতভাবে ব্যবহার করা উচিত। ফেসবুকের অপকারিতর মধ্যে একটি হল অপরিমিত ফেসবুক ব্যবহার এর কারণে ব্যবহারকারীর মনে হতাশা ও বিষন্নতার সৃষ্টি হয়। এই বিষন্নতার কারণে অনেক সময় মানুষ আত্মহত্যাও করে।

  • ভ্রান্ত ধারণা এবং গুজব:

ধরুন আপনি একটা ভুল তথ্য পেলেন এবং আপনি সেটাকে সঠিক মনে করে ফেসবুকে পোস্ট করলেন সেটা সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ছড়িয়ে গেল এই ভুল তথ্য অনেক সময় সমাজ এবং রাষ্ট্রের হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

  • নিরাপত্তাহীনতা:

পৃথিবীতে প্রায় সকলেরই ফেসবুক একাউন্ট/প্রোফাইল রয়েছে একটি ফেসবুক একাউন্ট খুলতে হলে আমাদেরকে আমাদের ব্যক্তিগত সকল তথ্য দিতে হয় তারপর আমরা যদি আমাদের আইডি লক না করি তাহলে,

কিছু অসাধু লোক আমাদের পার্সোনাল তথ্য নিয়ে যে কোনো খারাপ কাজ করতে পারে এবং এর জন্য আমাদের জীবন ও হুমকির মুখে পড়তে পারে তাই আমাদেরকে আমাদের ফেসবুক একাউন্টের প্রতি সচেতন হওয়া উচিত।

  • ফেসবুকের মাধ্যমে ভাইরাস প্রবেশ:

ফেসবুকে অনেক বিজ্ঞাপন বা তার লিংক দেয়া থাকে আমরা যদি না বুঝে সেই লিঙ্কে ক্লিক করি তাহলে আমাদের ফোনে বা আমরা যে ডিভাইস দিয়ে ফেসবুক একাউন্ট ব্যবহার করে থাকি,

সেই ডিভাইসে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে এবং এরা আমাদের ফোনে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে ফেলতে পারে এবং ধীরে ধীরে আমাদের ফোনক নষ্ট করে দিতে পারে। এজন্য আমাদেরকে বিভিন্ন লিংক, বিজ্ঞাপন, বা আ্যাপস ডাউনলোড করার সময় সচেতন থাকতে হবে।

  • পেশাগত বা একাডেমিক সমস্যা:

একজন ফেসবুকে আসক্ত ব্যক্তি সারাদিন ফেসবুক ব্যবহার করায়  তার পড়াশোনা, কাজকর্ম ব্যাহত হয় কারণ তার সম্পূর্ণ মনোযোগ ফেসবুকের দিকে থাকে এজন্য সে ধীরে ধীরে একাডেমিক বা বাস্তবিক জীবনের কাজকর্মে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়।

  • পরিশেষে বলা যায় যে পৃথিবীর সকল বস্তু বা বিষয় খারাপ এবং ভালো দিক থাকে আমাদেরকে বুঝে শুনে ভালো দিকগুলো গ্রহণ করা উচিত এবং খারাপ দিক গুলো বর্জন করা উচিত।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ