ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প?

রোজ রোজ মানুষ নানান অযুহাতে ডিপ্রেশনের দিকে ঝুঁকছেন! তাদের বাইরে আমরাও নেই। প্রতিদিন রাত হলেই বাড়তে থাকে ডিপ্রেশন, যেগুলো পড়ে আমরা আরও ডিপ্রেসড হয়ে যাই। সবার এতো শত ডিপ্রেশন দেখে ফেসবুক গ্রুপ ডিএসই সিদ্ধান্ত নিয়েছে “ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প” তুলে ধরার।

আমাদের চ্যানেলটি সাবসক্রাইব করুন

এটি কোন বানানো কাহিনী থেকে না, কোন সেলিব্রিটিদের মাধ্যমে মোটিভেশনাল স্পিচও না। সমাজে ঘটে যাওয়া আপনার আমার মতোই সাধারণ মানুষদের জীবনের ঘুরে দাঁড়াবার গল্প। আপনারও যদি এমন কোন গল্প থাকে যা অন্যকে নতুন আঙ্গিকে বাঁচতে শেখাবে, পাঠিয়ে দিন আমাদের কাছে।

অনুপ্রেরণা হোন অন্যের হেরে যাওয়া জীবনে।

গ্রাজুয়েশন শেষ করার আগে পর্যন্ত জীবনে বলা যায় কোন দুঃখ কষ্ট, অভাব পাইনি। বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় ছিল না। অনার্স করে চাকরির জন্য প্রিপারেশন নিতে থাকি। হঠাৎ করেই জীবনেটা পাল্টে যায়।

আব্বার কিডনি ড্যামেজ ধরে পরে। পরিবারের সবাই ভেঙে পরি। চিকিৎসা শুরু হয় কিছুদিন ভাল থাকার পর ডায়ালাইসিস শুরু করতে হয়। 

বুঝলাম জীবন কতো কঠিন, চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের কতটা কমার্শিয়াল। আব্বার অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হতে লাগল। ২০১৫ সাথে আমাদের ছেড়ে গেল।

আমরা দুই বোন এক ভাই, আপুর বিয়ে হয়েছে, ভাইটা তখন বিবিএ পড়ছিল মা চাকর করে। পড়াশুনা শেষ বাসায় আমি একাই থাকি সারাদিন। মা বুঝতে পারল আমার মানসিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। 

তাছাড়া আব্বা চলে যাওয়ায় আমাকে নিয়ে টেনশন ও বেশি করতে লাগল। মা আমাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। আমাকে ও বুঝানো হল। আমিও রাজি হলাম। 

কিছুদিন দেখাদেখির পর ছেলেও মিলে গেল। বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের প্রথম থেকে বুঝলাম সামথিং ইজ রং। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম রংটা কি। আমার প্রতি তার কোন আগ্রহই নেই। 

ভাবলাম অন্য মেয়ের সঙ্গে রিলেশন কিনা কিন্তু নাহ অনেক কিছু বিষয় দেখে বুঝলাম সেটাও সম্ভব নয়। আমি তার ফোন কখনো হাত দিলাম না। 

এক বছর কেটে যায় তার সঙ্গে। অপমান অসম্মান মেনে নিয়েই থাকলাম এই ভেবে আমি বাসায় কিছু বললে মা কষ্ট পাবে, টেনশন করবে। 

চাকরি জন্য একটু আধটু পড়তাম কিন্তু শ্বশুর বাড়ির লোকজন প্রাইভেট জবে ঢুকানোর জন্য নিরন্তর চেষ্টা করতে লাগল। অনেকবার বললাম প্রাইভেট জবে এখন ঢুকতে চাচ্ছি না। 

বলার পরও কাজ হল না। জব ম্যানেজ করেও ফেলল, আমিও মেনে নিলাম। এর মধ্যে একদিন সেই সো কলড হাজবেন্ডের ফোনে হাত দেই। 

যা পেলাম সেটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বিভিন্ন ভাবে চেক করতে কয়েক দিন আমার ভুল হচ্ছে কিনা। ফাইনালি শিউর হলাম সে একটা সমকামী। 

একটা বছরের সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম। আমাকে কেন জোড় করে বাসায়, গেস্টের বাসায় পাঠাত, কেন চাইত আমি তার কাছে না ফিরি সব উত্তর মিলে গেল।

কখন বাসায় পার্টনার বাসায় এনেছে কখন নিজেই কারও বাসায় গেছে টাইমের সঙ্গে মিলে গেল। আর মানতে পারলাম না। 

আমাদের বাসায় জানালাম। বাসায় চলে আসতে বলল আমাকে। আমি চলেও আসলাম। আসার পর ডিভোর্স চাইলাম। ডিভোর্সও দিল কিন্তু আমার নাম যা পাইল তাই বলল। 

আমি অর্নামেন্ট নিয়ে বয় ফ্রেন্ডের সঙ্গে পালিয়েছি, আমাকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছে মোহরানা ব্লা ব্লা ব্লা। 

আসলে আমি মোহরানা দাবি করিনি, আমার মায়ের দেওয়া ফার্নিচার আদায় করিনি (এখনো ব্যবহার করছে)। বিয়েতে দেওয়া গয়না তার মায়ের কাছেই থাকত, আমাকে পরতেই দেওয়া হত না। 

অনেকেই আমাকে পরামর্শ দিল মামলা করার জন্য। আমি শুধু চুপ থাকলাম কারণ মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত ছিলাম। 

আমার মা, ভাই, বোন ও বুঝতেছিল মোহরানা, ফার্নিচার আর তাকে শায়েস্তা করার থেকে গুরুত্বপূর্ণ আমার মানসিক সুস্থতা। 

একটা কোর্সে ভর্তি হলাম ফ্রেন্ডের পরামর্শে। তাদের সঙ্গেই হোষ্টেলে উঠলাম। সবাই স্টাডি শুরু করতে বলল কিন্তু আমি পড়তে পারছিল না। 

যখন মাঝেমধ্যে কানে আসে আমার নামে এসব বলে বেড়াচ্ছে। মা, ভাই বোন আর ফ্রেন্ডের সাপোর্ট আর সেই সমকামীর প্রতি ঘৃণা জীবনকে নতুন করে ভাবাল।

সবার থেকে নিজেকে দূরে রাখলাম কারণ একজন ডিভোর্সড মেয়েকে অনেক কিছু ফেস করতে হয়। স্টাডি শুরু করলাম, সরকারি  জবের পরীক্ষা গুলো দিতে থাকলাম।

নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে ভালও করলাম। তিনটার রিটেনে সিলেক্ট হলাম। দুটাতে ভাইভা দেওয়ার আগেই একটায় নিয়োগের জন্য মনোনিত হই। জয়েন করলাম জবে এক মাস হল।

আমার জন্য দোয়া করবেন। মা চাইছেন আবার বিয়ে করি, সংসার করি কিন্তু বিশ্বাস কাকে করি! আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।  

জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না, শুধু নিজে চেষ্টা করে এগিয়ে নিতে হয়। যে আপনার জীবন নষ্ট করার চেষ্টা করে, তার সেই চেষ্টা আপনার জীবনটাকে নতুন করে দাড় করানোর সাপোর্ট মনে করুন। 

আর হ্যা বিয়ে করার আগে অবশ্যই ভাল করে খোঁজ নিবেন।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments
HABIB - Nov 10, 2022, 10:27 AM - Add Reply

Nich

You must be logged in to post a comment.
Faruk Ahmad - Nov 12, 2022, 8:23 AM - Add Reply

আপনার কথা বুঝলাম না।।।দয়া করে খুলে বলবেন?

You must be logged in to post a comment.

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
লেখক সম্পর্কেঃ